আমার ক্রয়ক্ষমতা ফেরত চাই

  • মোশারফ হোসেন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মোশারফ হোসেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

মোশারফ হোসেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

আমাদের আয় বেড়েছে; কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি; কমেছে এবং দিন দিন কমেই চলেছে। আপনি হয়ত বলতে পারেন- বাজারে পেঁয়াজের দাম দেখে ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত। কিন্তু আমি বলব- শুধু পেঁয়াজ কেনো, কোনো অনেক কিছুই আরা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। মন চাইলেও আজ অনেক কিছুই আমরা ভাতের পাতে পাই না। কোন জিনিসটা নাগালের মধ্যে আছে? শীতকাল পড়ে গেছে, শীতের সবজি এখন বাজারে সয়লাব। কিন্তু কেজি ৬০-৮০ টাকার কমে মিলে না কোনো সবজি। বাজারে গেলেই যেন দুই হাজার টাকার কমে বাজার সারা যায় না। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আছে আবার যখন-তখন বন্যা, পরিবহন ধর্মঘট, পেঁয়াজকাণ্ড, লবণকাণ্ড- আরো কতো কী!

নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য সর্বোচ্চ কাঙ্ক্ষিত খাদ্য মাংস কিনে খাওয়ার সাধ্য এখন ক'জনের আছে। গরুর মাংসের কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা, খাসির মাংস কেজি ৮০০ টাকা। দেশি মুরগি তো এখন বিত্তশালীদের গৌরবের আহার! আমি আমার সামর্থ্যানুযায়ী ফার্মের ব্রয়লার মুরগি খাব; কম দামের তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছ খাব- তারও উপক্রম নেই; বিষাক্ত ক্রোমিয়াম আর এন্টিবায়োটিকে ভরা গরিবের এসব আহার।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ আর গ্যাস যেন কর্তৃপক্ষের জাদুর কাঠি। যখন তখন ঘষে নিয়ে ভোক্তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাসা ভাড়া তো বাড়িওয়ালাদের ছেলেখেলা- প্রতি বছর হাজার-দুই হাজার করে বেড়ে চলে। সাথে আছে পানির বিল, ময়লার বিল, লিফট চার্জ, দারোয়ানের বেতন, সার্ভিস চার্জ- কতো কী! ভাড়াটিয়ারা কথা বলতে চাইলে ঝেটিয়ে বিদায় করার উপক্রম হয়। এভাবে সবার পকেট ভারী করতে করতে নিজের পকেট ফাঁকা- মাসের পনের তারিখেই ব্যাংক এ্যাকাউন্ট শূন্য। শুরু হয় ক্যালেন্ডারে তারিখ গোনা- কখন বেতন পাওয়ার সেই কাঙ্ক্ষিত তারিখটি আসবে!

কিন্তু মাসের শেষের দিনগুলো যেন যেতেই চায় না। এরই মধ্যে ঘরের গিন্নী ফোন করে বলে, 'অফিস শেষে বাসায় আসার সময় আম্মার পাঁচ পদের ওষুধ, মেয়ের দুধ নিয়ে এসো। আর একটু তাড়াতাড়ি বাসায় এসো, আমার কোমরের ব্যথাটা খুব বেড়ে গেছে। ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়া হয়ে গেছে, আটটায় যেতে বলেছে।' আমার মাথায় কী যেন ভনভন করে। স্বাভাবিক হতে না হতেই আবার বউয়ের ফোন, 'তোমার ছোট ভাইয়ের নাকি ম্যাসে বাজারের ডেট পড়েছে, ওরে বিকাশে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দাও।' মাথা কাজ করে না! এ্যাকাউন্ট শূন্য জানি, কিন্তু গিন্নীর দেওয়া ফর্দের কোনোটাই তো অপশনাল নয়। তাহলে উপায়?

কোনো উপায় নাই। এটা তো প্রতি মাসেরই চিত্র। কিন্তু প্রতি মাসেই তো ভাই-বন্ধুদের কাছে হাত পাতা যায় না। তাই ভরসা সেই উচ্চ সুদের ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু এখানেও করুণ চিত্র- প্রতি মাসে বেতন পেয়ে ক্রেডিট কার্ডের মিনিমাম বিল হিসেবে যে টাকাটা জমা করি, পরের মাসে সে টাকাটাই আবার তুলতে হয়- কোনো না কোনো জরুরি প্রয়োজন মিটানোর তাগিদে। কিন্তু এরপরও একটা বিরাট টেনশন হৃদপিণ্ডে ঝুলেই থাকে- হঠাৎ যদি নিজের বা পরিবারের কারো বড় কোনো অসুখ বা দুর্ঘটনা হয়, তাহলে অর্থের সংস্থান হবে কোত্থেকে? আমি জানি- দুর্ভাবনার এ চিত্রটি আমার একার নয়; এমন অভিজ্ঞতার ভাগীদার অনেকেই।

কিন্তু এভাবে কতদিন চালিয়ে নেওয়া যায়? আমিতো অসৎ হতে পারব না। আবার আমি চাইলেও আমার আয় বাড়িয়ে ফেলতে পারব না। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে আড়াইগুণেরও বেশি। কিন্তু আমি বারবার চেষ্টা করেও ওই আড়াইগুণের বেশি ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়াদের মাঝে আমাকে খুঁজে পাইনি। আর আয়ের ঝুড়ি যখন তলাবিহীন, তখন বছরে বেতনের ইনক্রিমেন্টের সুবাদে বাড়া এক-দুই হাজার টাকার বাড়তি আয়ে কী হয়! শায়েস্তা খাঁর আমলের এক টাকায় আট মণ চাল আমি চাইব না। কিন্তু আমি আমার ক্রয়ক্ষমতা ফেরত চাই! হয় আমার সামর্থ্যের খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা দিন, ন্যূনতম জীবনমানের নিশ্চয়তা দিন; নয়তো আমার ক্রয়ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন!

 

মোশারফ হোসেন: ব্যাংকার