স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ

  • ড. এ. এইচ. এম মাহবুবুর রহমান ও ড. মতিউর রহমান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

আদিম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের জীবন ও সমাজ ব্যবস্থায় বিবর্তন, পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটেছে বহুবার। মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতি ও সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। মানুষের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে সাংকেতিক চিহ্ন, ভাষা, গোত্র, গোষ্ঠী, জাতি, নেতা, টোটেম ও ট্যাবু।

মানুষ দখলে নিয়েছে ভূখণ্ড তার নিজস্ব সীমারেখা চিহ্নিত করতে; সৃষ্টি করেছে সমাজ, সংগঠন ও রাষ্ট্র। গড়ে ওঠেছে স্বতন্ত্র জীবনাচরণ। সময়ের বিবর্তনে ও প্রয়োজনে অনেক কিছুই আবার নতুন করে সৃষ্টি করেছে এই মানুষ।

বিজ্ঞাপন

মানুষ ভেঙেছে গোত্র, গোষ্ঠী, সমাজ, সংস্কৃতি, সংগঠন, রাষ্ট্র ও ভূখণ্ড। অবিরাম লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে, অস্তিত্বের প্রয়োজনে- এভাবেই এগিয়ে চলেছে মানুষের জয়যাত্রা। মানুষ হয়ে উঠেছে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক।

আজকের ‘বাংলাদেশ’ নামক ভূখণ্ডটিও অনুরূপ ভাঙা-গড়ার সোনালী এক ব-দ্বীপ, যার অধিবাসী বাঙালি জাতি ও যার জনক এ মৃত্তিকারই এক স্বর্ণপুত্র, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। ডাকনাম যাঁর খোকা।

বিজ্ঞাপন

বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে পাওয়া ভালবাসার উপাধিতে যিনি ‘বঙ্গবন্ধু’। ১৯৭১ এ যার নেতৃত্বে বীর বাঙালি অস্ত্র হাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশকে হানাদারমুক্ত করে। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন- তাঁর প্রিয় বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার, তাঁর প্রিয় গরিব, দুখীর মুখে হাসি ফুটাবার। তারও আগে নিজ হাতে গড়েছিলেন প্রিয় দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। যেটির মাধ্যমে তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে স্বাধীনতার পর সবাইকে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ শুরু করেছিলেন।

কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট অকৃতজ্ঞ নর-ঘাতকদের নির্মম বুলেট তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ স্তব্ধ করে দেয়। শুরু হয় জনকের প্রিয় বাংলাদেশকে ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ছিন্ন-ভিন্ন করার হিংস প্রয়াস। কিন্তু পারেনি।

তারা হেরেছে এ দেশের গরিব, দুখী জনগণের কাছে। যে গরিব, দুখীর হৃদয়জুড়ে রয়েছে তাদের প্রিয় জনকের ভালোবাসা। সেই গরিব, দুখীরাই প্রত্যাখ্যান করেছে কুখ্যাত সেইসব কুচক্রীদের। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তারা। ১৯৭৫-এ দেশ জনকের রক্তে রক্তাত্ত সেই বাংলাদেশ কেমন আছে তা জানা বড় প্রয়োজন।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর হিংস্র হায়েনার দল দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংষ্কৃতি ধ্বংসের বিকৃত উল্লাসে মেতে ওঠে। অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জাতির পিতাকে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে।

কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ১৯৯৬-এর ১২ জুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বাংলার গরিব-দুখী আপামর জনগণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে।

দীর্ঘ ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। পঞ্চবার্ষিক (১৯৯৬-২০০২) পরিকল্পনা ঘোষণা করে দেশকে আত্মনির্ভরশীল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, টেলিযোগাযোগ, পরিবহন ও বেকারত্ব হ্রাসকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের জন্য কাজ করতে থাকেন। ১৯৯৬-এ উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মিত হয়। জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি বিল’ বাতিল করে দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দ্বার উম্মুক্ত হয়।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তি চুক্তি’ সম্পাদিত হয়। পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি ফিরে আসে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ‘ইউনেস্কো’ ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

২০০০ সাল থেকে সারা পৃথিবীর মানুষ বাঙালির মাতৃভাষা দিবসকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়।

বিগত একুশ (১৯৭৫-১৯৯৬) বছরের অনুন্নয়নের ধারা বদলে দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনরূপে গড়ে তোলার আধুনিক পকিল্পনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য উৎপাদনে আশাতীত সাফল্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসকরণ, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রকল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের সূচনা করেন।

১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরেও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির। ২০০১ সালে ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আপামর জনগণের রায়কে অসম্মান করে ও ‘নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করে ’৭১ ও ’৭৫-এর সেই পরাজিত শক্তি আবার ক্ষমতায় আসে।

আবার শুরু হয় তাদের ধ্বংস উল্লাস। পাঁচ বছরে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে তারা শ্মশানে পরিণত করে। অবশেষে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।

২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল ও উন্নয়নের ধারার সূচনা করেছিল।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেন। সেই থেকে অদ্যবধি তিনি অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। শত প্রতিকূলতা ও বর্বরোচিত জীবননাশের অপচেষ্টাকে উপেক্ষা করে এ দেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।

একযুগের অধিক জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থেকে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন। ২০০৮-এ প্রণীত নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ এর ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেয়া ‘রূপকল্প ২০২১’, ‘রূপকল্প ২০৪১’, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’, বিভিন্ন পঞ্চ-বাষির্কী পরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ সফলভাবে অর্জিত হয়েছে। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’-এর বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ সুগম হয়েছে। উন্নয়নের প্রধান শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত দেশের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে গত একযুগে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবেও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সূচকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিচার ব্যবস্থায়ও অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিও অনেক।

খাদ্য ও টেকসই কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে কৃষিখাতে ঘটেছে বিপ্লব। মৎস্য ও পশুসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইলিশ মাছ আহরণে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে আছে। জাতীয় মহাসড়কসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন (রাস্তাঘাট, ব্রিজ,কালভার্ট, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেকস ভবন, হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ইত্যাদি) হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জাতীয় আয় বেড়েছে, দরিদ্রের হারও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বাংলাদেশ রপ্তানি বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স অর্জনেও সাফল্য অর্জন করেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সমাজের দুর্গত মানুষের অভিগম্যতা বৃদ্ধি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, নারীর ক্ষমতায়ন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয় প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের ঘর প্রদান, বস্তিবাসীদের জন্য স্বল্পভাড়ায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট নির্মাণ, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অদম্য প্রচেষ্টা- এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের গরিব, দুখী মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা হয়ে উঠেছেন আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল।

সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এ দেশের আপামর জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ ঘুচিয়ে ‘উন্নয়নের রোল মডেলে’ পরিণত করেছেন।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পুরস্কার প্রাপ্তি এ অর্জনেরই স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলার’ দ্বারপ্রান্তে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা ইচ্ছা করলে ক্ষমতায় এসে দেশের জন্য কোনো কাজ না করে ক্ষমতা শেষে দেশে ও দেশের বাইরে বিলাসী জীবন কাটাতে পারেন। দেশে-বিদেশে যার অসংখ্য পূর্ববর্তী উদাহরণ আছে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেপথে যাননি।

তিনি প্রকৃত অর্থেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে উন্নত ও মর্যাদাশীল একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছেন। যার অনেকগুলোই আজ দৃশ্যমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পথে ধাবিত হবে।

২০২০-২১ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘মুজিব বর্ষ’। আজ থেকে একশত বছর পূর্বে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন ব্রিটিশ শাসিত এক ঔপনিবেশিক ভূখন্ড। পরাধীন সে ভূখন্ড ছিল দারিদ্র্যপীড়িত, অবহেলিত, জাতপাতে ভরপুর। এরপর ১৯৪৭ এ দ্বি-জাতি ত্বত্তের ভিত্তিতে দেশভাগও দেয়নি শান্তি ও স্বস্তি।

একই ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের করেছে শাসন ও শোষণ। করেছে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেই আধিকার আদায়ে যখনই বাঙালি জোর দাবী তুলেছে তখনই তারা চালিয়েছে গুলি। বাঙালির রক্তে বার বার রাজপথ হয়েছে লাল।

তাই ১৯৭১ এ আবারো জেগেছে বাঙালি। স্বাধীন করেছে তাদের নিজস্ব ভূমি ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া সেই বাংলাদেশে ছিলো সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। আর অর্ধ-শতক পরে সেই বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখন প্রায় সতের কোটি। ছোট্ট এই ভূখণ্ডে এত বিশাল জনসংখ্যা নিয়েও যে উন্নয়ন বিগত এক যুগে সাধিত হয়েছে-তা সত্যিই কল্পনাতীত।

এটাই প্রমাণিত দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তা সত্বেও এখনো রয়ে গেছে অনেক অপূর্ণতা। অসৎ কিছু মানুষের দুষ্কর্মে ও করোনা মহামারির আঘাতে ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। তবে বাঙালি ঘুরে দাঁড়াবেই।

আজ শতবর্ষ পরে সেই ভূখণ্ড বিশ্বের দরবারে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই ভূখণ্ডের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এ বছর (২০২১) বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।

প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার মধ্যেও বাঙালি জাতি গর্বের সাথে উদযাপন করেছে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব। প্রতি বছর ১৭ মার্চ বাঙালির জন্য এক সুবর্ণময় ও শ্বাশত আনন্দের দিন। আর ১৯৭৫ এর পর প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট বাঙালি জীবনে এক বিষাদময় কলংকের দিন।

কিন্তু জনক তোমার গরিব, দুখী বাঙালি হেরে যায়নি। হেরেছে ওই বিশ্বাস ঘাতক, ষড়যন্ত্রকারী, কুচক্রী নর-পিশাচরা। তোমার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে তোমার প্রিয় বাংলা আজ ‘সোনার বাংলা’ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তুমিই বলেছিলে ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’।

তোমার প্রিয় দুখী বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। যারাই দাবায়ে রাখতে চেষ্টা করেছে, তারাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তোমার প্রিয় কন্যার মধ্যে দুখী বাঙালি পেয়েছে দিশা। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে ভালো আছে জনক তোমার বাংলাদেশ।

ড. এ. এইচ. এম মাহবুবুর রহমান, চেয়ারম্যান, সমাজকর্ম বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

ড. মতিউর রহমান, গবেষণা পরামর্শক, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি), ঢাকা।