ইবিতে ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা ও ছাত্র সংসদ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক

  • ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা ও ছাত্র সংসদ গঠন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের ১১৬ নং কক্ষে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এসময় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলামিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী, ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, সায়েম আহমেদ, ইয়াশিরুল কবীর, তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি সাজ্জাতুল্লাহ শেখ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ।

বৈঠকে বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা এবং ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে মন্তব্য প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন

তারা বলেন, ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে বড় স্টেকহোল্ডার। তাই ছাত্র রাজনীতির কথা আসলে সবার আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিয়ে ভাবতে হবে ছাত্র নেতাদের।

কেননা, ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন ছাত্রনেতা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা বলবেন। এছাড়াও পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম যেনো অন্য কোনো দলের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে পূণরায় রিপিট না হয় সেটা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

এসময় বিভাগের প্রতিনিধিরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের জন্য প্রতিটা ছাত্র সংগঠনকে এগিয়ে আসতে বলেন। ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহায়তায় ছাত্র সংসদ গঠন করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সকল চাওয়া পাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস তাদের।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে বেরিয়ে এসে তোমাদের নেতৃত্ব বিজয় অর্জন করেছি। যেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সবাই ই কোনো না কোনো বিভাগ, হল এবং ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থী। আমাদের এই প্রতিটা সেক্টরের কোথাও যদি বৈষম্য থেকে থাকে তা দূর করতে হবে। কোথাও যদি বৈষম্য থেকে যায় তবে এই জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হবে। যদি তা না হয় আমরা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যনারে স্লোগান দেই তবে এই আন্দোলনের স্পিরিট থাকবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, জুলাই আন্দোলনের ৯ দফার এক দফা ছিলো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। আমরা আমাদের স্ট্যান্ডে এখনো ক্লিয়ার। ক্যাম্পাসে যদি কোনো ছাত্র সংগঠন রাজনীতি করতে চায় তবে অবশ্যই লেজুড়বৃত্তিক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অন্যতম অন্তরায় হলো শিক্ষক রাজনীতি। তাই শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তবে শিক্ষকদের পদ পদবীর জন্য অনেকসময় দলীয় রাজনীতি ভূমিকা রাখে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্পষ্ট বক্তব্য যে আমরা বৈষম্য নিরসনের জন্য এই বিপ্লব ঘটিয়েছি। তাই স্বচ্ছতা রেখে বৈষম্য দূর করে এসব জায়গায় যোগ্যদের স্থান দিতে হবে। এইটা আমাদের ঘোষণাপত্রেও স্পষ্ট।

ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিটা সংগঠনকে নিজস্ব আদর্শ প্রচারের সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের যে আদর্শ পছন্দ হবে তারা সেই আদর্শকে ধারণ করবে এখানে কাউকে জোরজবরদস্তি করার কোন সুযোগ থাকা উচিত না। শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা দরকার কারণ আমার মতে, এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনেক ঘটনা ঘটে শিক্ষকদের প্ররোচনায়। শিক্ষার্থীদের না হয় রাজনীতি করে ভবিষ্যতে অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের তো চাকরি নির্দিষ্ট, তার তো আর সামনে শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। ক্যাম্পাসের শিক্ষক রাজনীতি বৈধ থাকার কারণে তারা স্বার্থ হাসিলের জন্য শিক্ষার্থীদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করে। ছাত্র রাজনীতি হওয়া দরকার ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক। ছাত্রনেতাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতা এতটুকু থাকবে যাতে অন্য কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না হয়। এইটা নিশ্চিত করতে হবে। অভ্যুত্থানের আগে একটা দল এবং তার ছাত্র সংগঠন মিলে দেশটাকে একটা কারাগারে পরিণত করেছিলো। আমরা সেই প্রথা ভেঙে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। এখন সেই বৈষম্য থেকে বেরিয়ে এসে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যদি ব্যর্থ হই তবে আবারও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা হারাবে এবং জুলাই আগস্টের সেই চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে পারবো না।

এছাড়াও তিনি বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যে দাবী, ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠন। আমি চাই অতি দ্রুত এই ছাত্র সংসদ গঠিত হোক। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কোনো সমস্যা থাকলে তা সংস্কার করে হলেও এটা বাস্তবায়ন করা উচিত। মনে রাখতে হবে ছাত্রদের জন্য আইন, আইনের জন্য ছাত্র নয়।