ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগ নেতা আটক, থানায় সোপর্দ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রিটেক পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সহ-সভাপতিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। আটককৃত নেতার নাম মামুনুর রশিদ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) সকাল ৯:৩০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের তৃতীয় তলায় ৩১৫ নং কক্ষে শুরু হওয়া পরীক্ষা দিতে আসে আটক মামুন।
জানা যায়, এদিন সকাল থেকে ২০১৯-১৯ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের রিটেক পরীক্ষা চলছিল। মামুনের পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ তাকে গাড়িতে করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে একজন নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা পরীক্ষা দিতে আসার সাহস করে তা জানতে চায়৷ এছাড়াও একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে কীভাবে বিভাগের শিক্ষকরা সাড়ে ৩ ঘন্টা যাবত সাধারণ শিক্ষার্থীর ন্যায় পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন তা জানতে চায়৷
হট্টগোলের একপর্যায়ে শিক্ষকরা বিষয়টির তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত করার আশ্বাস দিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবীর, তানভীর মন্ডল, গোলাম রাব্বানী এবং অন্যান্য সদস্যরা প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভাগীয় শিক্ষকদের সহযোগিতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের হাত থেকে বাচিয়ে ইবি থানায় সোপর্দ করে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না; দোসরদের ঠিকানা, ইবিতে হবে না; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; ছাত্রলীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; দিয়েছি ত রক্ত, আরো দেব রক্ত ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই মামুনুর রশিদ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দিয়েছে। তারও আগে শিক্ষার্থীদের মারধরও করেছে সে। আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একজনকে মোল্লা বলে কটাক্ষ এবং অন্যান্যের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আজকেও সে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছে।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, একজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা যে এখন পর্যন্তও ফেসবুকে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে পোস্ট করে যাচ্ছে। এরকম একজন সন্ত্রাসীকে বিভাগের শিক্ষকরা কীভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে তা আমরা জানতে চাই। কয়দিন পরপরই একেকজন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কীভাবে পরীক্ষা দিতে আসার সাহস পায়, কাদের ব্যাকাপে এই পরিকল্পনা করে তা আমরা জানতে চাই। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, ছাত্রলীগের দোসরদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না৷
সহকারী প্রক্টর ফকরুল ইসলাম বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কে ঘিরে বিভিন্ন সময় যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তার অংশ হিসেবে আজকের ঘটনাটা আমাকে শঙ্কিত করেছে। এই ছেলের নামে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। সে একে ত নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য তার উপর আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিল। আজকে সে পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে। আমি শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই কারণ তাদের সহায়তায় আমরা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছি। এই ছেলেকে আমরা থানা হেফাজতে দিয়ে গেলাম এবং পরবর্তীতে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে সে। এছাড়া একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনে আছে।
তিনি আরও বলেন, সে পরীক্ষা দিতে আসলে যেনো মব সৃষ্টি না হয় সেজন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে আইনগত কি সিদ্ধান্ত নেয়া যায় সেটা দেখবো।
এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হামলার ঘটনায় আহত আরমান মীর বাদী হয়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় গত ৩০ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার ১৮ নং আসামী হিসেবে ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুন অর রশিদ কুষ্টিয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।