ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর ) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এর আগে গত (৮ সেপ্টেম্বর ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুহম্মদ মাহবুব কায়সারের নিকট স্মারকলিপিটি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে অধ্যাপক মাহবুব কায়সার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'কোনো এক কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম বন্ধ হয়ে যায়, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি বলতে হয় তাহলে বলব, আপনাদের দাবিটি যৌক্তিক। যদিও এই মুহূর্তে এটি আলোচনার মুখ্য কোনো বিষয় না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রেক্ষাপটে এটি বাতিল করেছিল, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে এবং নতুন প্রশাসন এ নিয়ে আলোচনা করবে। পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট সময় আছে। আমার মনে হয় আপনাদের আর আন্দোলন করার প্রয়োজন নেই। যেহেতু আপনাদের যে দাবি আমরা জানতে পেরেছি, তাই পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপর্যুক্ত জায়গাতে আলোচনা করা হবে।'
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে সেকেন্ড টাইমের জন্য আন্দোলন করছি। সরকার পতনের পর অনেকের অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের যৌক্তিক দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেনো মেনে নিচ্ছে না আমরা জানিনা। অথচ কয়েকবছর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ছিল। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডেও সেকেন্ড টাইম আছে। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এমন হয়েছে যে সেকেন্ড টাইম দেওয়া যাবে না। আমরা স্বাধীন দেশে কোনো বৈষম্য মানিনা। আমাদের দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতেই হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বরিশাল থেকে আসা মুইন নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা ২৪. কমকে বলেন, আমরা (গত ৮) সেপ্টেম্বর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিলেও এরপর তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। অথচ তারা পরবর্তী সেশনের ভর্তি পরীক্ষার সিডিউল দিয়ে দিছে। আমরা কোনো বৈষম্য চাইনা। আমরা দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার আন্দোলন হলেও কোনো সুরাহা মেলেনি।
কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৬৯ শতাংশ যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন।
সমন্বিত কৃষি ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা যায়, এ বছর মোট ৩ হাজার ৭১৮টি আসনের বিপরীতে ৭৫ হাজার ১৭ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৫১ হাজার ৮১১ জন।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট আটটি প্রধান কেন্দ্রে এবং তিনটি উপকেন্দ্রে একযোগে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম ব্যতিত বাকি আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল কেন্দ্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে উপকেন্দ্র করে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পঞ্চম বারের মতো অনুষ্ঠিত সমন্বিত এ ভর্তি পরীক্ষায় এবছর নেতৃত্বে দিচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি মেডিসিন এন্ড এনিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম লুৎফুল রাহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উপস্থিতির হার কিছুটা কম ছিল। ভর্তি পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
কৃষিগুচ্ছের ৩ হাজার ৭১৮ টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আসন সংখ্যা ১ হাজার ১১৬ টি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৯৮ টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩৫, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৪৮ টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭০ টি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৩১টি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালে ১৫০, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৯০ ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ টি আসন বিদ্যামান রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল আগামী ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত হবে এবং ৯ নভেম্বর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেন কৃষি গুচ্ছের ভর্তি কমিটি।
ছাত্রদলের ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
কৃষিগুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার আগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষিগুচ্ছ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের প্রধান দুই ফটকে দলীয় ব্যানার টানায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। পরবর্তীতে কে বা কারা ব্যানার ছিঁড়ে ফেললে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুইপক্ষের ধাওয়া পালটা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক জানান, আমরা সংঘর্ষের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু মারামারি হাতের নাগালের বাইরে হওয়ায় তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনার পরপরই রাতে সিকৃবির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
রাত ২টার পর দলটির দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো.জাহাঙ্গীর আলেমর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল। শিগগিরই এই ইউনিটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) কৃষিগুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার ২১০ জন পরীক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।