সমস্তকিছু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুম হয়ে যাবে

  • ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

ঘরহীন কোকিলা

শয্যা ছেড়ে গেলে
দেবে যাওয়া সিথানে উষ্ণতা ছড়ায়
স্বেদ-গন্ধ।
অনুযোগের ভঙ্গিতে পড়ে থাকে
দু’ চারটা ঝরে পড়া চুল।
একটাই মাত্র জীবন
তবু কত কত
পরাভূত অভিযোগে
চোরাবালি শুষে নেয়
বর্ণালি অনুষঙ্গ।
নির্বোধ মানুষ
হাত পেতে নেয়
শাস্তিযোগ্য কষ্ট
আনন্দ বদলে!
কী করি, কেন করি
ভেবে ভেবে
অনির্দিষ্ট প্রজন্ম
করে পার।
অনিশ্চিত সঙ্গমে
নিশ্চিত গর্ভবতী
কোকিলারাও ঘরহীন।

বিজ্ঞাপন


জ্বর

ক’দিন পরপরই জ্বর আসে কাঁপিয়ে
তুমিই প্রশ্রয় দাও,
উত্তাপ ভালোবাসো বলে!
আর বার জ্বর এলে ছেড়ে চলে যাব—
আমি ছাড়া সে-ই শুধু উষ্ণ উত্তপ্ত করে,
এক বনে চলে না
দুই রাজার শাসন!
জ্বরের চেয়েও বেশি দেব উত্তাপ—
জ্বর না আমি,
আমি না জ্বর
নিষ্পত্তির ভার তোমার হাতে,
কে থাকব!

বিজ্ঞাপন


কুচুটে ভালোবাসা

অপহরণ করে গুম করতে হবে না,
এমন ভালোবাসব যে
সমস্তকিছু থেকে
স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুম হয়ে যাবে—
অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না জনগণ
চারিদিকে খোঁজ খোঁজ পড়বে
জোর তলব চলবে
হারিয়ে গেছ বলে
জনরবও উঠবে।
কিন্তু, মজার ব্যাপার কী জানো—
তুমি নিজেই বেরুবে না,
বেরুতে চাইবে না
ভালোবাসার গুহা থেকে!
এমন ভালোবাসা দেব যে
মাটির নিচে অনেক দূরতক
গজিয়ে যাবে শেকড়বাকড়
নিজেই উপড়ে ফেলতে চাইবে না,
উপড়াবেও না
গভীরে যাওয়া শেকড়!
এমনভাবে ভালোবাসব যে
আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না,
কিছুই চাইবে না!
তোমাকে তো বলেইছি
আমার ভালোবাসা
ভীষণ কুচুটে
ভারী হিংসুটে!


ছাই-রঙা সুরমা

বেলাভূমির সুরমারঙে সমুদ্র আছড়ে পড়লে
শুকনো পাটকাঠির মতো মুচমুচে হয়ে যায় অনতিক্রম্য দূরত্ব!
দিয়াশলাই-কাঠির ক্ষুদ্র বারুদ জ্বলে ওঠে দপ করে,
খাক হয়ে যায় পরিপাটি তিলোত্তমা-নগর!
আগুন ধরবার আগে-পরে হলেও
ছাই আর সুরমার রঙে পার্থক্য করতে পারি না বিশেষ!
ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নগরীর জন্যে কাঁদি,
গলে গলে পড়ে স্বপ্নচোখে মাখা সুরমার নীলাভ-ছাই রঙ।
সুশ্রী-সুখী হতে আবারও এগিয়ে যাই ধ্বংসস্তূপে,
হাঁটুমুড়ে, অবিশ্বাসী-ছাই মেখে নিই বিশ্বাসী-দুচোখে!