পথ ও পথিকের যাবতীয় অন্তিম

  • তানিম জাবের
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

শস্য মদ ঝলসানো তিতির ও নারী

মৃত পাখির বুকে হিলিয়াম ভরে পুতে রাখি—
তবু সময় উড়ে পালায়, তবু দুঃসময় জানালায়।

বিজ্ঞাপন

পৃথিবীসহ তারাও হয়তো একদিন উড়ে যাবে
সূর্যের আরো কাছে, উবে যেতে কর্পূরের মতো।

এইভাবে মৃত্যুরে রাখি সিথানে আর পাশ ফিরে হই
মুখামুখি, বলি তারে—জীবনের সমূহ বিরহ বেদনার
ফিরিস্তি, বলি তারে—মৃত্যুর এই পারে আছে এইসব
শস্যক্ষেত দেখার লোভ, ঝলসানো তিতির, অফুরান
মদ, আছে নারী, আর আছে শিশু—
শিশুর মতো করে দেখার পৃথিবী,
আছে বেঁচে থাকার নিষিদ্ধ আনন্দ।

এইসব মদ, নারী, শস্য ছেড়ে কে চেয়েছে কবে ফিরতে!
সে বলে না জবাবে কিছু, সরে থাকে আসার মতো দূরত্বে।

সাগরেরা এইসব শুনেছে কিছুকাল,
তারপর ভাটায় ফিরে গেছে আগের মতো।
মৃত্যুর তাতে কীইবা যায় আসে
সে তো যতটা আসার, ততটা এসে বসে থাকে—
হাঁটু গেড়ে পাশে, জীবনেরে মৃত্যুসম ভালোবেসে।


যাত্রী

অন্ধ গলির মতো পথ শেষ হয় রাতের, এখানেই ভোর,
বলে যায়—গেন্দা ফুলের পাতারা, নীরবে নেমে আসা
শিশিরের আঁচলতলে লুকায় ছিল যত বন্ধ সকাল

‘তথাপি নিস্কৃতি নেই’—এই বলে চলে গেল সৈন্ধব লবণ
বন থেকে অদ্যাবদি যত নিশ্চল গাছেরা—সুন্দরী,
পশুর, গোলপাতা ছাওয়া আকাশ এসে বসে পায়ের কাছে,
অপলক; অকরুন অসীমার মতো।

হায় তবু কে পেরেছে দিতে আমাদের এমন মনোলগ,
তোমার চিঠি পাইনি, আমার চিঠি ও পৌঁছায়নি,
অনিশ্চিত জেনেও জাহাজী ভেসেছে অপান্তরে,
কোনো নাবিক তবু নেমে যায় সামনের বন্দরে।

সকাতরে কাঁদে—যেন নিনাদ, যেন ঘোর, যেন আসবে
বলে সে অপেক্ষা হয়েছে শেষ, তস্কর নিয়ে গেছে আগামী
এই ভেবে বাড়ি ফিরে যেতে চায় পথ ও পথিকের যাবতীয় অন্তিম

আমারে তবু ধরে রাখে বন্দের হাওয়া, ধান কাটা শেষ হলে
জোয়ারের পানি আসার অপেক্ষাদের মৃত স্মৃতি, ঢাউক
ঘুড়ি ভেনা বাজিয়ে উড়ে যাবার শব্দ, আর, আর এক উঁচু
দাঁতের শ্যামলা কিশোরীর জোড়া বেণি।

তবু তুমি আইসো, ঘুমাইলে তো স্বপ্নও আসে।


সমুদ্র সফর

কেবলই বালি বালি সৈকতে নেমে আসে সাগর,
আসে আর যায়, সন্ধ্যার বাতাস কাঁপায় যে ঝাউবৃক্ষের ছানাদের,
তারা আরো নিচু হয়ে থাকতে শেখে,
নিচু আর সহনশীল, তারা তো পায় না মরুর ঝড়
তবু তারা কী দারুন বেদুঈনের মতো
হতে শিখে নেয় ক্রমশ থেকে ক্রমশ।
মাথা নিচু, পিঠ বাঁকা, টানটান।

যদিও সমুদ্রই জীবন, কচ্ছপের তবু থাকে বালিজীবন,
দীর্ঘতর সমুদ্রজীবনের পাশে ক্ষুদ্র সেই বালিজীবনে তারা
গর্তে ফুটবে, ফিরে যাবে সমুদ্র জীবনে, কেবলই তীরে আসা
তার, অথচ কী আরো গভীর এক না থাকাকে ফেলে যাবে
নাকি নিয়া যাবে সাথে আমি তো জানি না তা। আমার এ
ক্ষুদ্র না জানা কচ্ছপের দীর্ঘজীবনের পাশে বালি-ধূলা।

ঝিনুকের জীবনের কী মানে যদি কুড়ায়েই নিল তারে,
বালি-বালি তীরে যদি তার না-ই হলো সমাধি তবে কি
আর রইল তার ঝিনুক জীবনে, সে কি হতে চায় কার
গলার মালা? যে ঝিনুকের খোলের পাশে নাই সমুদ্র সমুদ্র
বালুতট, সরে সরে যায় না যে সাগরের টানে,
সেই ঝিনুক
জীবনের কী থাকে আর মানে!

নুন সমুদ্র জানে না জোয়ার বলে গেছে বালুতটের কাছে—
কত স্রোতে ভাঙবে এ বালিঘর।