উত্তরে বিদায়, পশ্চিমে তুলেছি প্রশ্ন

  • সাখাওয়াত টিপু
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

সাদা চোখ

মৃত্যুর ছায়ার নিচে দীর্ঘ হচ্ছে রে জীবন
পথের রেখাও যাচ্ছে মুছে শীতল আগুনে
আহা অগ্নি কত কাণ্ড হলে কোনো ভুবনের
হাসতে হাসতে তব প্রাণ যাও দৈব ঘরে

বিজ্ঞাপন

সব মেঘ ঘরে ফেরে অথচ ফেরে না প্রাণ
শব্দহীন মানুষের ভাষা কে বুঝিতে পারে
যে অশ্রু তীরের বেগে চিবুক ভিজিয়ে রাখে
তারও কিছু কথা থাকে হিমালয়ের চূড়ায়

শান্ত হাত নৈঃশব্দ্য পা সাদা চোখ দুটো কার
তার দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস কে বয়ে নিয়েছে হায়
অসীম নীরব থেকে উড্ডীন আকাশে তার
শোকাবহ ছায়া নিয়ে কভু ফিরবে না আর

আধুনিক মানুষের শোক মাত্র একদিন, তবে
যে ছায়া বিছায় ঘরে তার আয়ু বহু বহুদিন!

ফাঁক হচ্ছে যে হৃদয়

কত দূর হতে কথা কও সোনা
বসিয়াছো বুকে তুমি ঢের ধুকে ধুকে
আমি তো অবশ সখি, গান গান শুনে।

হাত গুনে গুনে মনে দোনামোনা
এই লো দেখিব, হাতের পাঁচ আঙুলে
নাচ রক্তে রক্তে, ওঠো বাউণ্ডুলে!

চুমো দিলে দাও না দিলে জমা রাখ ঠোঁটে
বাকি ক’টা দিন বাকস্বাধীনতা দিয়ে যাও
ধ্বনি হতে ভাব অভাবের কেচ্ছা শোনাও।

বাসবার কথা কয়ে কোন ডালে ফোটে
চেনো বা না চেনো কি আসে যায় চেনার
ফাঁক হচ্ছে যে হৃদয়, দেখো এই মুখ কার?

উত্তরে বিদায়, পশ্চিমে তুলেছি প্রশ্ন
দখিনের বায়ু কয়, হৃদয়ের মুক্তি ছাড়া
মানুষের আর কোনো বাকস্বাধীনতা নাই।

অতি আধুনিক কবিতা!

শব্দের মতন তুমিও হারায়ে যাও
শূন্য ওই রেখা দিয়ে তোমাকে কি
বেঁধে রাখা যেত, বৃত্তের ভেতর!

তাহলে কে তোমাকে খুঁজে বেড়াত
তবে বলা যেত একেকটা আঙুল
একেকটা রাস্তার মতন দেখাত।

এখন আমার বয়স বেড়েছে
এমনই বয়সে তোমাকে আর
খোঁজার সময় নাই, জানু!

এই ঘরেরও কোনো মানে নাই
কেন না তোমার কাছাকাছি এলে
ভিতরে কেবল শব্দ শুনি তা না
অথচ তোমারেই দেখি না।

আব্বার মৃত্যুর পর...

আব্বার মৃত্যুর পর উত্তর আকাশে মেঘ জমেছিল। মেঘ ডাকছিল শীতে। সূর্য নেমেছিল মেঘেরও নিচে। তাহলে আব্বা কি মেঘের জন্য জেগেছিল! দেখলাম: আব্বার মৃত্যুতে আমাদের জানালার মৃত কাঠগুলো গুমরে কাঁদছে। কাঠের আল্মিরা থেকে শব্দ হচ্ছে। আম্মা চৌকাঠের ভাষা বুঝতেন। শব্দ মাত্র জড়। স্থিতি জড়তার যেখানেই শেষ সেখানেই অর্থ শোকাকুল হয়। আমরা কখনো ভাবিনি এমন জড় পদার্থও আব্বাকে ভালোবাসতেন।
পুকুরের মাছগুলো সেদিন ডাঙায় উঠেছিল। আব্বার বিদায় তারাও মানেনি। আমাদের বাগানের বাঁশগুলো হেলে গেল মদিনার দিকে। আমরা তাকিয়ে ছিলাম নোয়াবাড়ির দিকে। সেখানে কাঁদছে জারুল পারুল বাদাম শেফালি করই সেগুন মেহগনি। আব্বা একদম চুপচাপ। নিথর চোখের মধ্যে আব্বার দুমণি সাদা হয়ে গেল। দেখলাম: দুই চোখে কদমফুলের আভা। আমরা তখনও ভাবিনি জীবন এত অন্ধকার!
কতদিন আব্বাকে ডাকি না। আব্বাও জানেন, আমার অক্ষম বাক্য কবর পর্যন্ত যাবে না কখনো। সন্ধ্যা হলে আব্বার কবর কে যেন পাহারা দেন। পাখি ডাকে সারারাত। মাঝে মাঝে শাদা ফেরেশতা হেঁটে যান রমনাগাছের দিকে। আর কবরের ঘাসগুলো সাদা হয়ে যায়। জোনাকির মতো আমি তার মাজুল সন্তান। জানি না কিছুই। ফের যদি মৃত্যুদিনে স্বপ্নে জিজ্ঞাসেন: ইহজাগতিক বুদ্ধি কেন এত কম? নির্ভয়ে বলব: ইহজাগতিক নিদ্রা হতে কবরের ঘুম অধিক উত্তম।