প্রাণের মেলায় প্রথম ছুটির দিন
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণে ছিল বই পড়ুয়াদের আনাগোনা। সকাল থেকেই সাধারণ পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীরা ভিড় করতে থাকেন মেলা প্রাঙ্গণে।
মেলা প্রাঙ্গণ সকালে কচি-কাঁচাদের হৈ-হুল্লোড়ে মুখরিত ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে জনসমাগম। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলার প্রধান ফটকের সামনে থেকে টিএসসি মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকালে অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সস্ত্রীক পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।
পরে বেলা এগারোটা থেকে শুরু হয় বই মেলার প্রথম শিশুপ্রহর। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শিশুদের জন্য বিশেষায়িত এদিনটি ছিল শিশুর চোখে দেখা স্বপ্নের পৃথিবীর মতো। পাখির কলতানের মতো শিশুদের হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশু চত্বর। সিসিমপুরের ইকরি ও হালুম শিশুদের বিনোদনে বাড়তি আমেজ নিয়ে আসে।
শিশু প্রহরে নিজের অভিব্যক্তি জানিয়ে শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন বার্তা২৪.কমকে বলেন, শিশু প্রহরের দিনটায় এই চত্বরের সার্বিক পরিবেশে আমি স্বর্গীয় আবহ অনুভব করি। শিশুতোষ প্রকাশনার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও একটা সুশিক্ষিত আগামী প্রজন্ম গড়তে আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। বাচ্চাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সচেতনভাবে ভালো কিছু বই সন্তানদের হাতে তুলে দিতে হবে। যেসব বই তাদের চরিত্র ও জীবন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
শিশুপ্রহর ও মেলায় অংশ নিতে শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন অনেকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বই মেলার শিশুপ্রহরে অংশ নিতে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন জান্নাতুল লামিয়া। লামিয়া এবার স্টান্ডার্ড টু'তে পড়াশোনা করছেন। মেলায় এসে পছন্দের লেখকদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলে সেলফিও তুলেছেন বলে জানান এই ক্ষুদে পাঠক। দুটি নৃত্য শেখার বই এবং একটি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই কিনেছে লামিয়া।
শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুত, রম্য গল্প ও ছড়া কবিতার বইয়ের সঙ্গে এবার ক্ষুদে পাঠকরা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই বেশি চাইছেন।
বাংলা একাডেমির গগণসংযোগ উপ-দফতরের তথ্যমতে শুক্রবার বই মেলায় নতুন বই এসেছে ৩০৮টি।
সাত ভাই চম্পা নামে এক প্রকাশনা সংস্থার স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজই বিক্রির খাতা খুলেছেন তারা। লোক সমাগম বাড়ার সঙ্গে বিক্রিও বেড়েছে বলে জানান অন্যান্য স্টলের বিক্রেতারা। ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় প্রথম কর্মব্যস্ত ও প্রাণবন্ত দিন ছিল আজ বলে জানান অন্যপ্রকাশের জ্যৈষ্ঠ বিক্রয় প্রতিনিধি।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ "লেখক বলছি" মঞ্চে জমে উঠেছিলো কথা সাহিত্যিক, কবি ও অন্যান্য লেখকদের আড্ডা। আজকের লেখক বলছি মঞ্চে উপস্থিত থেকে নিজেদের নানা অভিজ্ঞতা ও লেখা বিষয়ক আলোচনা পাঠকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও লেখক তুষার আব্দুল্লাহ, কবি শিরিন পারভীন, কথা সাহিত্য কাজী রাফি এবং কবি কুমার চক্রবর্তী। মনি হায়দারের সঞ্চালনায় লেখকদের নিয়ে এমন আলোচনা ও পাঠক-লেখক প্রশ্ন উত্তর পর্ব বেশ উপভোগ করেছেন মেলায় আগত পাঠকগণ।
মূল মঞ্চে বিকেল চারটা থেকে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা বঙ্গবন্ধুর বীর গাথা গ্রন্থের ওপর আলোচনা করেন কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক ও লেখক খাইরুল আলম সবুজ। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নবীন ও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই কিনতে স্টলগুলোর সামনে ভিড় করেছেন পাঠকগণ। লেখক ও প্রকাশকদের থেকে অটোগ্রাফসহ বই কিনতে ছোট ছোট জটলাগুলোতে ফুটে উঠেছিলো বই মেলার চিরচেনা রূপ।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা খুলে দেওয়া হবে সকাল এগারোটায়। বেলা এগারোটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত চলবে বই মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর। শিশুদের বাড়তি বিনোদনের জন্য শনিবারও সিসিমপুর খ্যাত ইকরি ও হালুম।