যেমন যাচ্ছে হুমায়ূন প্রেমীদের বইমেলা
নন্দিত নরক নিয়ে আবির্ভূত হলেও দেশীয় কথা সাহিত্যের জগতটা আমৃত্যু নিজের জন্য স্বর্গে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন তিনি। অগোছালো হিমুকে দিয়ে কথা বলিয়ে ভঙ্গুর ও বিশৃঙ্খল সমাজকে গোছাতে চেয়েছিলেন, জট লাগা বাস্তবতার রহস্য উন্মোচনে যিনি সৃষ্টি করেছিলেন মিসির আলি, তিনিই আবার জোছনা ও জননীর গল্প শুনিয়ে হয়েছেন বাদশাহ নামদার। তিনি হলেন নন্দিত লেখক ও কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি চিরদিনের জন্য চলে যান না ফেরার দেশে।
দেশীয় কথা সাহিত্যের সব থেকে জনপ্রিয় নন্দিত এই লেখককে ছাড়াই চলছে সপ্তমবারের মতো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। অথচ একটা সময় ছিল, বইমেলায় পাঠকরা আসতো হুমায়ূন আহমেদের সান্নিধ্য নিতে। ভিড় লেগে যেত তার প্রকাশিত বইগুলোর প্রকাশনা স্টল অন্যপ্রকাশের সামনে। কিন্তু বিগত বইমেলার সেই চিরচেনা রূপ এখন আর নেই। তাহলে কেমন চলছে হুমায়ূন প্রেমী আর হিমু ভক্তদের বইমেলা?
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে জানার চেষ্টা করা হয়েছে হুমায়ূন পাঠক ও হিমু ভক্তদের প্রতিক্রিয়া।
কথা হয় কবি নজরুল কলেজের রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা করা হুমায়ূন পাঠক লিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমি প্রথম পড়তে শুরু করেছি শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বই দিয়ে। ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন কোনোভাবে স্যারের লেখা ময়ূরাক্ষী বইটি আমি পেয়েছিলাম। সেটি দিয়ে শুরু, তারপর একের পর এক তার লেখা বই পড়তে শুরু করেছি এবং একটা বই একের অধিক পড়েছি। একটু বড় হওয়ার পর প্রতি বছর অপেক্ষা করতাম বইমেলার জন্য। কারণ, এই সময়টাতেই চাইলে প্রায় প্রতিদিন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। তাকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে পূরণের জন্য তখন প্রতিদিন মেলায় আসতাম। সেই অভ্যাসটা এখনো রয়েই গেছে। মিস করি সেই সময়টা।’
হুমায়ূন আহমেদের অবর্তমানে অন্যপ্রকাশের বইমেলা কেমন যায় এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকাশনাটির তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিনিধি শাহ ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘স্যারকে (হুমায়ূন আহমেদ) মিস করি। উনি না থাকায় আমাদের ব্যবসায়িক প্রভাব তেমন একটা বদলায়নি। তবে স্টলের সেই পুরনো প্রাণ আর নেই। তুলনা করব না, কিন্তু বিগত সাত বছর আমরা এক ভিন্ন বইমেলা পার করছি।’
সহপাঠীরা মিলে বইমেলায় এসেছে বদরুন্নেসা গার্লস স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। সবাই নিজেদের পছন্দের হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই কিনেছেন। তাদের কাছে হুমায়ূন আহমেদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, হুমায়ূন স্যারকে আমরা অনেক মিস করি। শুধু মিস না আফসোসও হয়।
এ সময় তাদের একজন শাহনীরা শারমিন বলে ওঠে, ‘স্যারের একটি অটোগ্রাফসহ বই যদি আমি পেতাম তাহলে সেটা আজীবন আগলে রাখতাম। বড়রা যখন আমার সঙ্গে বইমেলায় স্যারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা গল্প করেন তখন খুব খারাপ লাগে। আমি কেন আরও বড় হলাম না। তাহলেই তো স্যারের সঙ্গে আমারও দেখা হতো।’
মেলায় অন্যপ্রকাশের পুরনো বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। হুমায়ূন আহমেদের অনুপস্থিতি তাদেরও মন পোড়ায়। তারা বলেন, সময়ের জনপ্রিয় লেখদের বই আমাদের স্টলে থাকলেও এখনো দিন শেষে হুমায়ূন আহমদের বই বেশি বিক্রি হয়।