মানবপাচারকারীর খপ্পরে ৮ মাস ধরে নিখোঁজ নবীগঞ্জের যুবক

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিখোঁজ যুবকের পাসপোর্টের ফটোকপি, ছবি: সংগৃহীত

নিখোঁজ যুবকের পাসপোর্টের ফটোকপি, ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নের দেশ ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে মানবপাচারকারীর কবলে পড়ে ৭/৮ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন কবির হোসেন (৩৫) নামে নবীগঞ্জের এক যুবক। দীর্ঘদিন ধরে তার সন্ধান না পেয়ে অবশেষে হবিগঞ্জ মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন নিখোঁজ কবিরের বাবা টনু মিয়া।

ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে নবীগঞ্জ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, স্বজনের সন্ধান না পেয়ে অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে পরিবারের।

বিজ্ঞাপন

নিখোঁজ কবির হোসেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মামদপুর গ্রামের বাসিন্দা টনু মিয়ার ছেলে।

সূত্রে জানা যায়, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় স্বপ্নের ইউরোপের দেশ ইতালি যেতে একই গ্রামের লেবানন প্রবাসী আব্দুস সত্তারের মাধ্যমে নূরুল আমীনসহ কয়েকজনের সাথে কথা হয় কবির হোসেনের। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন দালাল চক্রকে। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দালাল চক্র কবিরকে প্রথমে লেবানন নিয়ে যান। সেখানে আব্দুস সত্তার ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম তাকে তাদের বাসায় রাখেন। ইতালিয়ান ভাষা শেখানোর কথা বলে সেখানে তাকে ২/৩ মাস রাখা হয়।

২০১৯ সালে জুন মাসের দিকে কবির হোসেনকে বিমানে ইতালি না পাঠিয়ে জাহাজে ওঠানোর চেষ্টা করেন। এ সময় কবির হোসেন জাহাজে উঠতে রাজি না হলে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে দালালদের চাপে ও ৭ লাখ টাকার কথা চিন্তা করে জাহাজে ওঠেন তিনি। এরপর ইউরোপের সীমান্তে কবিরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন আব্দুস সত্তার। এ সময় তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। পাশাপাশি মুক্তিপণ না দিলে কবিরকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এরপর থেকে কবিরের সাথে পরিবারের সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

কোনো উপায় না দেখে ২০১৯ সালের নভেম্বরে কবিরের পরিবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সামাজিকভাবে বিচারপ্রার্থী হন। সামাজিক বিচারে সিদ্ধান্ত হয় আব্দুস সত্তার ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম কবিরকে নিঃশর্তে দেশে ফিরিয়ে আনবে এবং ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু এরপরও দালালচক্র কবিরের কোনো সন্ধান দেয়নি এবং তাকে দেশেও ফিরিয়ে আনেনি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ৭ জনের নাম উল্লেখ করে হবিগঞ্জ মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ে়র করেন কবিরের অসহায় পিতা টনু মিয়া।

ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য নবীগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন গোপলা বাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাওছার আলম।

এ ব্যাপারে নিখোঁজ কবির মিয়ার পিতা টনু মিয়া বলেন- ‘আমি টাকা-পয়সা ফেরত চাই না। ৭/৮ মাস ধরে আমার ছেলের সন্ধান পাচ্ছি না। আমি চাই দ্রুত আমার ছেলে আমার কাছে ফিরে আসুক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের সহযোগিতা এবং দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ ব্যাপারে গোপলা বাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাওছার আলম বলেন- ‘এখনও মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’