দুই’শ বছরেও ঐতিহ্য হারায়নি হবিগঞ্জের ‘মাছ মেলা’

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ

৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ

দুই’শ বছরেও ঐতিহ্য হারায়নি হবিগঞ্জের পইলের মাছের মেলা।

দুইদিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই মাছ মেলা শুরু হয়েছে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল থেকে। মেলায় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছরই এ মেলার আয়োজন করেন সদর উপজেলার পইল গ্রামবাসী।

বিজ্ঞাপন

এবার মেলায় প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ নিয়ে এসেছেন আহম্মদ আলী নামে এক মাছ ব্যবসায়ী।

দুই শ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এই মেলায় মাছ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সমাগম ঘটে। পইলসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ এই মেলাকে তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য বলে ধারণ করেন।

 হবিগঞ্জের পইলে মাছের মেলা

মেলা দেখতে বুধবার দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতে শুরু করেন। বিকেল হওয়ার আগেই মেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। শুধু হবিগঞ্জ জেলাই নয়, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলা দেখতে আসেন নারী-পুরুষরা। বোয়াল, বাগাই, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির আকর্ষণীয় মাছ নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন বিক্রেতারা। মেলায় সবচেয়ে বড় মাছটি নিয়ে এসেছেন আহম্মদ আলী নামে এক ব্যবসায়ী। প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। শুধু বড় বড় মাছই নয়, পাশাপাশি দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট মাছও পাওয়া যায় মেলায়।

প্রত্যেকটি দোকানের সামনেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বেচাকেনাও চলে ব্যাপক। অনেকে মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত ছিলেন।

মাছ বিক্রেতা আহম্মদ আলী বলেন- ‘মেলায় আমরাই সবচেয়ে বড় মাছ তুলেছি। ৩৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটি ৬০ হাজার টাকা দাম চেয়েছি। ৪০ হাজার টাকা দাম হলে বিক্রি করব।’

অন্য মাছ বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন- ‘বিভিন্ন নদী ও হাওর থেকে মাছ আসে এখানে। আমি প্রতিবছরই এ মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের মাছ নিয়ে আসি। এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটায় খুব ভালো বেচা-কেনা হয়।’

মেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল

মেলায় ঘুরতে আসা রহমত আলী বলেন- ‘প্রতিবছরই আমি মাছের মেলায় আসি। নিজের সাধ্য ও পছন্দ মতো মাছ কিনে নিয়ে যায়।’

পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ বলেন- ‘মাছের মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। এ মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। মেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মেলা কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আশাকরি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সুন্দরভাবেই মেলা সম্পন্ন হবে।

হবিগঞ্জ পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন- ‘ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসি। এখন ব্যস্ততার কারণে কোথাও যাওয়া হয় না, কিন্তু এরপরও এই মাছের মেলায় আসতে ভুল করি না।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন- ‘মেলায় এসে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। বাবার হাত ধরে মেলায় ঘোরার স্মৃতিগুলো যেন চোখের সামনে ভাসছে।’

তিনি বলেন- ‘এই মাছের মেলাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কারণ এখানে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ধরা বড় বড় মাছ উঠেছে। আমি আশা করব সুন্দরভাবে মেলা শেষ হবে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’