পুলিশের রক্তে অস্ত্রোপচার হল গলাকাটা শিশুর

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রক্ত দিচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ছবি: বার্তা২৪.কম

রক্ত দিচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ছবি: বার্তা২৪.কম

সৎমায়ের ধাঁরালো ছুরির আঘাতে ছয় ইঞ্চির মতো কাটা গলা নিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলো ছোট্ট শিশু ফারজান। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে তার অপারেশন করতে পারছিলোনা রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রক্ত বের হতে হতে সাড়ে চার বছর বয়সী শিশুটি যখন নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি, ঠিক সেই সময় কর্তব্যরত দুইজন পুলিশ সদস্যের দেওয়া রক্তে আবারো তাজা হয়ে উঠলো ফারজান। 

রক্ত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করান। চিকিৎসকদের ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে তার কেটে যাওয়া অন্তত ৬ ইঞ্চি গলার চামড়া জোড়া লাগিয়ে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলেছেন। রোববার দুপুরে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই যেন একই গ্রুপের রক্তবহনকারি দুই ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর খান জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে আনার আগেই তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখানে আনার পর সে অনেকটা নিস্তেজ হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা তাড়াতাড়ি রক্ত খুঁজতে বললাম স্বজনদের। হাতে সময় বেশি ছিলোনা দেখে আমরা উৎকণ্ঠিত ছিলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে এবং ঘটনার আকস্মিকতায় আমাদের এখানে দায়িত্ব পালন করা দুজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে জানালেন তাদের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ এবং তারা রক্ত দিবেন। তাৎক্ষনিকভাবে আমরা রক্ত সংগ্রহ করে শিশুটির কাটা অংশটি সেলাই করতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আল্লাহর রহমতে শিশুটির অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। পরবর্তীতে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্যে আমরা তাকে চট্টগ্রাম রেফার্ড করেছি।

বিজ্ঞাপন

শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শওকত আরও জানান, ওই দুজন পুলিশ ভাই যদি তাৎক্ষনিকভাবে রক্ত দিতে এগিয়ে না আসতেন তাহলে হয়তো শিশুটির পরিস্থিতি দুঃখজনকও হতে পারতো।

সর্বশেষ তথ্যানুসারে জানা গেছে, বর্তমানে শিশু ফারজান চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। রাত আটটার দিকে তার জ্ঞান ফিরেছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার পিতা ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার। তার অবস্থা আগের চেয়ে সামান্য উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রোববার শিশুটিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে তার সৎ মা কাউসার ফেরদৌস। শিশুটির এই অবস্থা দেখে তার মা চিৎকার করে ও পরে স্থানীয়রা এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ফারজানের সৎ মা কে গ্রেফতার করেছে।

আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৪ বছরের শিশুকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা