এখনো চোখে পড়ে লাঙল-গরুর হাল

  • তোফায়েল হোসেন জাকির,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জমি চাষে ব্যস্ত কৃষক/ ছবি:বার্তা২৪.কম

জমি চাষে ব্যস্ত কৃষক/ ছবি:বার্তা২৪.কম

কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। দেশের ৮০ ভাগ লোক একসময় কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক টুকরো লোহার ফাল দিয়ে তৈরি লাঙল, জোয়াল আর বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করে জমি চাষাবাদ করতেন তারা। স্বল্প মূল্যের এই কৃষি উপকরণ এবং গরু দিয়ে শত শত বছর ধরে কৃষি জমি চাষ করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।

যান্ত্রিক আগ্রাসনে ও বৈজ্ঞানিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে লাঙল দিয়ে জমি চাষাবাদ। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কৃষিতে পরিবেশ বান্ধব লাঙল-জোয়ালের জায়গা দখল করে নিয়েছে যান্ত্রিক পাওয়ার টিলার আর ট্রাক্টর।

বিজ্ঞাপন
লাঙ্গল-জোয়াল ও গরু নিয়ে মাঠের পথে কৃষক/ছবি:বার্তা২৪.কম 

এই অত্যাধুনিক যুগেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মাঠে লাঙল-গরু দিয়ে হালচাষ করার চিত্র চোখে পড়ে।

এক সময় গরুর হাল ছাড়া কৃষকের জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না। এতে পেশাদার হালুয়ারা (হাল মালিক) সকালে উঠে হাতে নিতেন দুই গরু। আর ঘাড়ে লাঙ্গল-মই ও জোয়াল নিয়ে ছুটে যেতেন মাঠে। দুই গরুর ঘাড়ে জোয়াল এর মাঝখানে দিতেন লাঙ্গলের লম্বা ইঁশ। হালুয়ার ইশারায় চলতো গরুগুলো।

দিনভর চাষ শেষে কাদা সমান করতে ব্যবহৃত হতো মই। জোয়ালের দুই পাশে দুটি লম্বা রশি লাগাতেন মইয়ের সঙ্গে। এই মইয়ের মাঝখানে উঠতেন হালুয়া। ইঙ্গিতে চলতো গরু, সমান হতো জমি।

জমি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক/ ছবি:বার্তা২৪.কম

সাদুল্লাপুর এলাকার পেশাদার হাল মালিক (হালুয়া) আসোজ্জামান মিয়া বলেন, এক সময়ে অন্যের জমিতে হালচাষ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন। পূর্বপুরুষের এই পেশা ছাড়েননি তিনি। এখন নিজের জমিতে হাল চাষ করেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃষক খাদেমুল ইসলাম মণ্ডল জানান, ছোট ছোট উঁচু-নিচু জমি চাষ যা কখনো পাওয়ার ট্রলি দিয়ে সম্ভব হয় না। এসব জমি চাষে এখনো লাঙলের হাল ব্যবহার করা হয়।

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, লাঙলের হাল দিয়ে জমি চাষে অনেক সময় অর্থ ব্যয় হয় কৃষকের। এখন প্রযুক্তিতে অল্প সময় ও অর্থ খরচ করে অনায়াসে জমি চাষ করতে পারেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে কমছে কৃষি জমি। এক সময়ের কৃষকের সঙ্গী লাঙল, জোয়াল ও মই এসব হয়তো এক সময় চির বিশ্রামে গিয়ে জাদুঘরে স্থান পাবে আর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাংলার কৃষি যুগের গৌরব মনে করিয়ে দেবে।