ঝিনাইদহের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে থাকেন না চিকিৎসক
স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত ১২ নভেম্বর ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ৮৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে সদরে ১৫ জন, শৈলকুপায় ১৫ জন, হরিণাকুন্ডুতে ১৫ জন, কালীগঞ্জে ১৬ জন, কোটচাঁদপুরে ৮ জন ও মহেশপুরে ১৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন করা হয়েছে।
কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার শর্ত দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হলেও মানছে না তারা। এতে করে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
যোগদানের এক মাস পেরেই গেলেও কেউ কেউ এখনও কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। পুরনোদের পথেই হাঁটছেন নতুন চিকিৎসকরা। পালা করে কর্মস্থলে অফিস করছেন কেউ কেউ। কেউবা আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছেন।
ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভবন থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোন অবকাঠামো নেই এ অজুহাতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছেন না পদায়নকৃতরা। থাকছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা হাসপাতালগুলোতে। যে কারণে সেবা পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষগুলো। সেই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শৈলকুপার কচুয়া ও হাটফাজিলপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘ দিন পর ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে দুই জন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও কেউ সেবা দিতে যাননি। পদায়ন থাকলেও তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসছেন। এতে ওই এলাকার মানুষের সেবা নিতে দূরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হচ্ছে।
কচুয়া গ্রামে ব্যবসায়ী শহিদুজ্জামান বলেন, সরকার চিকিৎসা সেবা গ্রামের মানুষের দোরগোরায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা সেখানে আসছেন না। এতে আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি সেই সাথে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যটি মানুষের অগোরচরে রয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন ভবন নেই, তবে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভবন রয়েছে। সেখানে বসে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে পারেন। তারপরও স্থাপনা নেই এ অজুহাতে গ্রামে আসছেন না চিকিৎসকরা।
একই এলাকার খন্দকবাড়িয়া গ্রামের জাহিদ হোসেন বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসার স্থান নেই তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগ সেখানে চিকিৎক নিয়োগ দিল কিভাবে। নিয়োগ দিলে তারা কেন গ্রামে এসে চিকিৎসা দিবেন না। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অরুন কুমার দাস জানান, কালীগঞ্জে ১৩ জন নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ১ জনকে বারোবাজার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও বাকিদের ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে পদায়ন করা হয়েছে। ইউনিয়নে পদায়নকৃতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছেন। সেখানে বসার স্থান না থাকার কারণে চিকিৎসকরা যেতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কাজ করতে হবে। কোন অজুহাত চলবে না। যদি এর ব্যাহত ঘটে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।