ঝুলে আছে গাংনীর ১২৪ মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ১২৪ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৫ সালের গেজেটের বলে তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে অমুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার অভিযোগ রয়েছে। বার বার তাদের বিষয়টি সামনে আসলেও চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে তারা অংশগ্রহণ করেননি। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

গাংনীর চৌগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত হারেজ আলীর ছেলে বুলু মন্ডল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পৃথকভাবে ১২৪ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তিনি বলেছেন, বিগত জোট সরকারের আমলে (২০০৫ সালে) কোন রকম ভারতীয় নম্বর, লাল মুক্তিবার্তা, বামুস সনদ ব্যতিত ১২৪ জনকে নামমাত্র গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। যাদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সদস্য। যা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আইন পরিপন্থী। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে ১২৪ জন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিলের দাবি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা ২০১৬ অনুযায়ী সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে। চলতি বছরের ১১ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে একটি নির্দেশনাপত্র পাঠানো হয়। জামুকা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা ২০১৬ অনুযায়ী লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কিছু যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামুকায় আবেদনকৃত, ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তা তালিকার বাইরে শুধুমাত্র গেজেটভুক্ত/তালিকাভুক্ত/সরকারি চাকরি গ্রহণের সময় ঘোষণা প্রদানকৃত/শুধুমাত্র সাময়িক সনদপ্রাপ্ত এবং ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তা তালিকার বাইরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র যাচাই-বাছাই এর অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে অদ্যাবধি গাংনী উপজেলায় শুধুমাত্র গেজেটভুক্ত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে কেন যাচাই-বাছাই হচ্ছে না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা সমালোচনা রয়েছে। ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মাঝে।

এ বিষয়ে গাংনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্তাজ আলী বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৬ সালে সারা দেশে উপজেলা ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়। আমি ওই কমিটির সদস্য ছিলাম। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গেজেটভুক্ত এসকল মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করার জন্য আমরা চিঠি দেয়। কিন্তু কেউ ফর্ম গ্রহণ করেননি এবং যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেননি। সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন আর আমি সদস্য। ওই সময়ে আমরা যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি যা খুবই লজ্জাজনক। এ দায় আমারা এড়াতে পারিনা উল্লেখ করে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি। তাদের ভাতা এখনো চলমান রয়েছে বলেও জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

ভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তৌফিকুর রহমান বলেন, ২০০৫ সালের গেজেটের ভিত্তিতে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা রয়েছে। যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে তারা মুক্তিযোদ্ধা নাও হতে পারেন। তখন তাদের গ্রহণকৃত ভাতার সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। এ মর্মে ২০১৬ সালে লিখিত মুচলেকা নিয়ে তাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, ২০০৫ সালের গেজেটভুক্ত ১২৪ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও প্রতিদিন আরও অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।