বরগুনায় সিডরের ক্ষত না সারতেই বুলবুলের আঘাত

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় বাড়িঘর, ছবি: সংগৃহীত

সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় বাড়িঘর, ছবি: সংগৃহীত

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, দিনটি ছিল বুধবার। রাত যখন ৮টা বাজে তখন উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত বরগুনার বাসিন্দারা। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। সচেতন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করলেও বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। রাত ১০টায় প্রবল বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হয় জলোচ্ছ্বাস। শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। যার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বরগুনা উপকূলের ঘরবাড়ি। ওই রাত এখনও ভয়ানক রাত হিসেবে পরিচিত মানুষের কাছে।

জানা গেছে, সেই ঘূর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যেই উপকূলীয় জনপদগুলো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, ফসলের মাঠ- এমনকি গাছের সঙ্গে ঝুলে ছিল মানুষের লাশ। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সহায়সম্বল ও স্বজন হারানো মানুষগুলো ফিরে যেতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। সেইদিনের ভয়াবহতা ভুলতে না ভুলতে আবারও আঘাত হানলো ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।

বিজ্ঞাপন

২০০৭ সালের এদিনে ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনা জেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৩৪৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন আরও ১৫৬ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। আর আহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৫০ জন। এছাড়া ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১টি পরিবারের ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গবাদি পশু মারা যায় ৩০ হাজার ৪৯৯টি, ১ হাজার ২৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৪২০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১ হাজার ৭৯৭ মিটার ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার এবং আছিয়া বেগম সেই রাতে কয়েকজন স্বজন হারান। সেই স্মৃতিচারণ করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘সেই রাতে ৭ জন স্বজন হারিয়েছিলাম আমরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হয় জলোচ্ছ্বাস। রাত ১০টার পরই সিডর আঘাত হানে। প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ চারজনকে। অন্যদিকে আছিয়া বেগম তিনজন স্বজনকে হারিয়েছেন সেই রাতে।’

বিজ্ঞাপন

আমতলী উপজেলা ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রামে থেকে ১৪ জন দিন মজুর পানের বরজের জন্য ধানশিলতা সংগ্রহে ট্রলার নিয়ে সুন্দরবন এলাকার দুবলারচরে যায়। সিডরের রাতে তাদেরকে ট্রলারসহ ভাসিয়ে নিয়ে যায় পায়রা নদীর মোহনা সংলগ্ন টেংরাগিরি বনের কাছে। এদের মধ্যে ৪ জন জীবিত ফিরে আসলেও ১০ জন আজও নিখোঁজ। নিখোঁজ জেলেদের পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘সিডরের রাতে বরগুনায় সাগরে ৩৭৫টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয়। এইসব জেলেরা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তাদের পরিবারগুলো আজও তাদের পথ চেয়ে রয়েছেন।’

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পাস হলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’