হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়েই স্বাবলম্বী অর্ধশতাধিক পরিবার

  • মো. জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নেত্রকোনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী অর্ধশতাধিক পরিবার

হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী অর্ধশতাধিক পরিবার

নেত্রকোনার মদন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রাম কুঠুরিকোণা। গ্রামটি দেশব্যাপী হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর জন্য বেশ পরিচিত। শুধু হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে এ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার এখন স্বাবলম্বী।

জানা গেছে, গ্রামটিতে অনেকে এখনো হারিকেনের আলোর তাপে হাঁসের বাচ্চা ফোটান এবং তা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। ফলে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার তরুণ-তরুণী ও নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কুঠুরিকোণা গ্রামে অনেক কম দামে হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার খামারিরা এখান থেকে বাচ্চা নিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুঠুরিকোণা গ্রামে ১৯৯০ সালে হাদিস উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি হারিকেনের আলোর তাপ ও তুষ দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা পান। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছোট ভাই ইয়াছিন মিয়া এই ব্যবসার হাল ধরেন। তাদের সফলতা দেখে বর্তমানে গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার এ ব্যবসা করছেন।

হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর জন্য বিছানার উপর ডিম রাখছেন এই নারী 

ইয়াছিন মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে হারিকেনের আলো ও তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’

কীভাবে এসব বাচ্চা ফোটানো হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাঁসের ডিম সংগ্রহ করা হয়। তারপর এসব ডিম একদিন রোদে তাপ দিতে হয়। তাপ দেওয়ার পর ডিমগুলো ছোট ছোট কাপড়ের পুঁটলি বেঁধে বিশেষভাবে তৈরি ঝুড়িতে রেখে ১৮ দিন হারিকেনের আলোর তাপ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে ডিমগুলো তুলে বিছানায় (বেডে) রাখা হয়। ডিমগুলো বেডে রাখার ২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটতে শুরু করে। কুঠুরিকোণা গ্রামে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয়।’

এদিকে, হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে একজন মডেল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইয়াছিন মিয়া। তিনি বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও প্রশিক্ষক হিসেবে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেন। তার প্রশিক্ষণ নিয়ে খামারিরাও সফল হয়েছেন।

২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটতে শুরু করেছে

ইয়াছিন মিয়া বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ হ্যাচারিটি আরও বিস্তার লাভ করবে।’

এ বিষয়ে মদন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ‘কুঠুরিকোণা গ্রামটিতে ৮০টির মতো পরিবার হাঁসের খামার ও তুষ পদ্ধতিতে হাসেঁর বাচ্চা ফোটানোর কাজ করে। গ্রামটি আমি পরিদর্শন করেছি। গ্রামটি এক সময় সারাদেশে মডেল গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।’