এমপিওভুক্তির অপেক্ষা, ১৯ বছরেও শেষ হলো না
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের পাশে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বাড়ৈপাড়া ইউনিয়নে গড়ে তোলা হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের কাছে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে অধ্যক্ষ মুহা: ফরিদ উদ্দিন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। কিন্তু, ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) হতে পারেনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারিরা।
‘আমার বয়স হয়েছে। এই শেষ বয়সে কলেজের এমপিওভুক্ত আমি দেখে যেতে চাই। আমার কলেজে ২৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা বিনাবেতনে পাঠদান করেন। এমপিওভুক্তি না হওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। কিন্ত সেই তালিকায় নাম না থাকায় হতাশ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন কলেজের ষাটোর্ধ্ব অধ্যক্ষ মুহা: ফরিদ উদ্দিন।
জানা গেছে, এ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০০ সালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের পাশে দেড় একর জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে পাঠদানের অনুমতি এবং একাডেমিক অনুমতি পেয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার মধ্যে একাধিক শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে। কলেজে কম্পিউটার ল্যাবসহ ৪ তলা ভবন ১টি, পাশে ১তলা পুরাতন ভবন ১টি, ২টি টিনশেড ঘর রয়েছে মাঠে। সম্প্রতি চার তলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।তবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিনা বেতনে প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে পাঠদান করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা।
হামিদুল ইসলাম নামের এক প্রভাষক জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমি এই কলেজের সাথে সম্পৃক্ত। জীবনে অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে সক্ষম হলেও সরকার আমাদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অনেকেই এই কলেজ ছেড়ে গেছেন। কিন্তু, আমি ছাড়তে পারিনি। পান্তা ভাত খেয়েও দিনের পর দিন এই কলেজে ক্লাস নিয়েছি। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এখন মনে হচ্ছে আমিও সেসময় এই কলেজ ছেড়ে দিলে অন্য কোন চাকরি হত।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার ফলাফল, অবকাঠামো, শিক্ষার্থীর সংখ্যা-সব কিছু বিবেচনা করলে আমাদের কলেজটি এমপিও হওয়ার যোগ্য ছিলো। এই কলেজের কুলসুন নাহার নামের এক শিক্ষার্থী অডিট অফিসার হিসেবে রাজশাহীতে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স, নুর আমিন, আতাউল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস দিয়েছেন। আমার শেষ ইচ্ছা, এই কলেজটি যেন এমপিওভুক্ত হয়। তাহলে আমি যেন মরেই শান্তি পাবো।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা বাড়ির কাছেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শিক্ষকরা পাঠদান করবেন।