বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত জাহাঙ্গীরের

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোন্টিফোর.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীর মিয়া, ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীর মিয়া, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় সুযোগ পাওয়া গাইবান্ধার মেধাবী  ছাত্র জাহাঙ্গীর মিয়ার ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জাহাঙ্গীর মিয়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হুড়াভায়া খাঁ গ্রামের রাহেদুল ইসলামের ছেলে। তার বাবা ইট ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও দারিদ্রতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেধাবী জাহাঙ্গীরের। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। ছোট বোন সুন্দরগঞ্জ সদর মহিলা মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ভাইয়ের বয়স মাত্র এক মাস। পরিবারে অভাবের ছাপ থাকলেও কোন বাধা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। অদম্য মেধাবী জাহাঙ্গীর জয় করেছে সকল প্রতিবন্ধকতা। ২০১১ সালে পিইসি পরীক্ষায় হুড়াভায়াখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে সমাপনী শেষ করেন।

২০১৪ সালে সুন্দরগঞ্জ আ: মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে গোল্ডেন প্লাস পায়। এরপর ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

২০১৭ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে (বিজ্ঞান বিভাগ) জিপিএ ৫ লাভ করেন। এরপর সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে (মানবিক বিভাগ) জিপিএ ৪.২৫ পয়েন্ট পায়। তারপর শুরু হয় জাহাঙ্গীরের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছে। দারিদ্রতার কারণে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর।

চলতি বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে অংশ গ্রহণ করে মেধা তালিকায় ১৮৭১ স্থান অর্জন করেন। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে আই ইউনিটে ৩য় স্থান অর্জন করেন। এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে অংশ নিয়ে মেধা তালিকার ১৫৩ তম স্থান পায়। কিন্তু মেধাবী জাহাঙ্গীর উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নে বাধা হয়ে দঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।

অন্যদিকে, এক সময় অভাবের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসে জাহাঙ্গীরের। পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে সংসারের হাল ধরতে ঢাকার গার্মেন্টসে যেতে বলে দিনমজুর বাবা। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারেনি। তবে, পড়ালেখার খরচ চালাতে গিয়ে যখন দিনমজুর বাবাকে হিমশিম খেতে হয়েছে তখন এক কোচিংয়ের শিক্ষক পাশে দাঁড়ায় জাহাঙ্গীরের। বিনা খরচে কোচিং ও টিউশনি করান তিনি।

দেলোয়ার হোসেন নামের ওই শিক্ষক জাহাঙ্গীরের জন্য ৫ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিংয়ের ক্লাশ শুরু করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে সব সহপাঠী যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছে তখনো জাহাঙ্গীর উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। বাড়িতে বসে পুরনো বড় ভাইদের ভর্তি গাইড পড়ে প্রস্তুতি নেয় সে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় সুযোগ পায়। কিন্তু আর্থিক সমস্যা এখন বড় বাধা তার।

মেধাবী জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। স্বপ্ন দেখেছি বড় হয়ে দেশের সেবা করবো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও টাকার জন্য ভর্তি হতে পারছি না। এতে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আমি শঙ্কিত।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মিয়ার দিনমজুর বাবা রাহেদুল ইসলাম বার্তাটোন্টিফোর.কমকে বলেন, আমার অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেখানে ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। আমার ছেলে অনেক পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন নষ্ট হতে বসেছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

মেধাবী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাহায্য পাঠাতে চাইলে ০১৭০৫-৪৪৫১৮৮ (জাহাঙ্গীর) ও ০১৯৬৫-১৩৯২৪০ (বাবা) নম্বরে পাওয়া যাবে।