গান গেয়ে সংসার চলে ওদের

  • এস এম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলিদুল ইসলামসহ তার গানের দল। ছবি: বার্তা২৪.কম

অলিদুল ইসলামসহ তার গানের দল। ছবি: বার্তা২৪.কম

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়িতে আগত দর্শনার্থীদের গান গেয়ে বিনোদন দেওয়া সেই অন্ধ বাউল আতিয়ার রহমান অসুস্থ। পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আর নিজে চলতে পারেন না। তবে তার ছেলে অলিদুল ইসলাম এখন বাবার আসনে বসে গেয়ে শোনান রবীন্দ্র সঙ্গীত।

ডুগি, তবলা আর হারমোনিয়াম বাজিয়ে গেয়ে ওঠেন 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। অসাধারণ গায়কিতে দর্শনার্থীরা যেন ফিরে পায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসল সুর। মুগ্ধ হয়ে যান তারা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়ির পুকুরপাড়ের বকুলতলায় দেখা হয় অলিদুল ইসলামসহ তার গানের দলের সঙ্গে। নিচে মাদুরের উপর বসে দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

অলিদুলের নেতৃত্বে রানু বিশ্বাস, কিতাই সরদার, জামাত আলী প্রামাণিক ও হায়দার আলীর সমন্বয়েই সংগীত পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিছু দর্শনার্থী চেয়ারে বসা মাত্রই তারা শুরু করে দেন 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমার পরানো যাহা চায়, আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান।

অলিদুলের গান শুনে অনেকে দশ-বিশ টাকা দেন। এই টাকাতেই চলে তাদের সংসার।

এদিকে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে বাউল অলিদুলের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত অন্যরকম এক অনুভূতি জাগায়। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, লালন গীতি ও রশিদ বাউলের গান গেয়ে থাকেন তিনি। অলিদুল শিলাইদহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ওমর ফারুখ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এখানে এসে রবীন্দ্রসংগীত শুনে খুব ভালো লাগছে।’

অলিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে আমার বাবা আতিয়ার রহমান এই বকুলতলায় গান করতেন। এলাকার আরও তিনজন কৃষককে সঙ্গে নিয়ে তার এই গানের দল ছিল। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাবার এই গানের আসরে আসতাম। আমার ইচ্ছে দেখে বাবাও আমাকে তার মতো গান রপ্ত করতে বলতেন। আমারও বেশ ভালো লাগত।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা গানের পাশাপাশি কৃষক ছিলেন। ধান মাড়াইয়ের সময় চোখে ধানের গোছার আঘাত লাগে। এরপর ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে অন্ধ হয়ে যান তিনি। তারপর থেকেই আমার বাবাকে অন্ধ বাউল নামেই চেনে সবাই।’

কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মখলেচুর রহমান জানান, বকুলতলায় অন্ধ শিল্পী আতিয়ার গান গাইতেন। তিনি অন্ধ হলেও তার বেশ ভালো গলা ছিল। বর্তমানে অন্ধ শিল্পী আতিয়ার অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে গান গেয়ে শোনান।