প্রকৃতিতে দেখা মেলে না মৌচাকের

  • মাজেদুল হক মানিক, মেহেরপুর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মৌচাক। ছবি: বার্তা২৪.কম

মৌচাক। ছবি: বার্তা২৪.কম

রবি ফসল ও মৌসুমী ফুলে হাজারো মৌমাছির বিচরণ। রস আহরণের প্রতিযোগিতা। মুখে রস নিয়ে মৌমাছি যায় আপন গন্তব্যে। উঁচু গাছের বাঁকা ডালের নিচে নিরাপদ স্থানে বিস্ময়কর সৃষ্টি মৌমাছির আবাস। যাকে মেহেরপুরের মানুষ মৌচাক বলেই জানে। এক সময় গ্রাম ও শহরে ব্যাপকভাবে মৌচাকের দেখা মিললেও এখন তা অধরা। প্রজননের পরিবেশ ও আবাসন সমস্যার কারণে মৌচাক ও মৌমাছির বিলুপ্তি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

‘মৌমাছি, মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি। একবার দাঁড়াও না ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ কবিতার মতোই ছিল মৌমাছির বিচরণ। যা এখন অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতোই। পাঠ্যবইয়ে ছেলেমেয়েরা কাজের লোক কবিতা পড়ে মৌমাছির অস্তিত্বের কথা জানলেও বাস্তবে তা এখন তেমন খুঁজে পায় না।

জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অধিক তাপমাত্রা, চাক বাঁধার প্রতিকূল পরিবেশ ও যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার মৌমাছি বিলুপ্তির প্রধান কারণ।

দেশে তিন প্রজাতির মৌমাছির দেখা মেলে। পাহাড়িয়া, ক্ষুদে ও খুড়েল। বড় বড় গাছ ও দালানের কার্নিশে পাহাড়িয়া মৌমাছি চাক বাঁধে। খুদে মৌমাছি বন-বাদাড়ে ছোট ছোট গাছে এবং খুড়েল বিভিন্ন বড় বড় গাছের কুঠুরিতে বাসা বাঁধে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু প্রকৃতির বড় বড় গাছ গিলে খেয়েছে ইটভাটা। এছাড়াও বড় বড় ভবন মালিকরা ভীতি থেকে মৌমাছি তাড়িয়েও দেয়। অন্যদিকে অদক্ষ বাওয়ালিরা (যারা চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে) অপরিকল্পিতভাবে মধু সংগ্রহ করেন। ধোঁয়া ও আগুনের আঁচ দিয়ে মৌমাছি তাড়াতে গিয়ে তা মেরে ফেলা হয়। এসব কারণেই আজ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৌমাছি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/04/1551708627690.jpg

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ জানান, এখন আর মৌচাক তেমন দেখা যায় না। মৌচাক এখন এলাকার মানুষের স্মৃতিতে ঠাঁই পেতে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না মৌমাছিরা কীভাবে চাক তৈরি করে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মৌমাছি সংরক্ষণ করা জরুরি।

এদিকে মৌমাছি বিলুপ্ত হতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফল ও ফসল উৎপাদনে। মৌমাছি যেমন ফুলের রস আহরণ করে জীবন ধারণ করে, তেমনি উপহার দেয় মধু।

এ প্রসঙ্গে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কে.এম শাহাবুদ্দীন আহমদ জানান, মৌমাছি ও পোকামাকড় পরাগায়নে সহায়তা করে। এগুলো না থাকলে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত ধ্বংস হবে। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীও থাকবে না। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরাগায়ন প্রক্রিয়া খুবই দরকারি।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এহসানুল কবির জানান, মধুর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ আছে, যা এনার্জি দেয়। কফ অ্যান্ড কোল্ড (সর্দি কাশি), নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসায় মধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এছাড়াও যেকোনো মানুষ সকালের নাস্তাতে মধু খেতে পারেন। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে মধু।