বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর চাষিরা এখন বীজ আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও একদল অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৬৫ টাকায় পাওয়া যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে বীজের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় চাষিরা ফসলের মাঠে নামার আগেই হতাশায় ভুগছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার আলু আবাদ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এবারও দেখা যাচ্ছে বীজ আলুর সংকটের একটি কৃত্রিম পরিস্থিতি। এই সংকটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম আদায় করছে এবং কৃষকরা এর শিকার হচ্ছে। কৃষি দফতরও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা বিভিন্ন বৈঠক করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। তারারা বলছেন, যেখানে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়া মানে কৃষকদের জন্য একটি বড় সংকট।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবারের আলু আবাদ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে হওয়ার কথা, যার মাধ্যমে উৎপাদন লক্ষ্য রাখা হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে বীজ আলুর প্রয়োজনীয়তা ৫৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন হলেও বর্তমানে রাজশাহীর কোল্ডস্টোরেজগুলোতে মজুদ রয়েছে ৩৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। আর চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আলুর বীজ এরইমধ্যে উত্তোলন করা হয়ে গেছে। ফলে চহিদার চেয়ে শুধু ক্লোডস্টোরেজগুলোতেই ১ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন আলুর বীজ বেশি রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসিসি) সরকারি বীজ রয়েছে আরো প্রায় ৬০০ মেট্রিক টনের মতো। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এমন অবস্থায়ও বাজারে কেনো বীজ আলুর সংকট তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে সাধারণ কৃষকরা ক্ষুব্ধ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষক তাদের নিজস্ব উৎপাদন থেকে বীজ আলু সংগ্রহ করলেও, ক্ষুদ্র কৃষকরা কখনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ কিনে থাকেন।
কৃষি দফতরের তথ্য মতে, সরকারি সংস্থা বিএডিসি মোট চাহিদার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে। এর বাইরে ব্রাক এবং অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বীজ উৎপাদন করে। কিন্তু সমস্যা হলো, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বীজ সাধারণত ভালো হয় এবং চাষিদের চাহিদা মেটাতে এই বীজই তারা কিনতে চায়। তবে এসব বীজের দাম ডিলার ও প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বাড়িয়ে দেয়, যা কৃষকদের জন্য একটি বড় চাপ।
এছাড়া বিএডিসি তিনটি জাতের বীজ বিক্রি করে- এ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড, এবং সানশাইন। এই বীজগুলোর দাম ডিলার পর্যায়ে ৫২ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি হওয়া উচিত। তবে কৃষকের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে ৮০ থেতে ১০০ টাকায়। বেশিরভাগ চাষি অভিযোগ করছেন যে, বাজারে বীজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। তাদের মতে, তারা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বীজ পেয়েছেন, কিন্তু এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
পবা উপজেলার আলু চাষি এন্তাজুল হক বলেন, বীজ আলুর সংকট তৈরি করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। এতে আমাদের কাছে বীজের দাম অত্যধিক বাড়ানো হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে বীজের দাম বাড়াচ্ছে। এর ফলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম নামে এক চাষি জানান, তিনি প্রতি বছর নিজের তৈরি বীজ ব্যবহার করতেন, তবে এবছর তা সম্ভব হয়নি। গত বছর যেখানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রি হয়েছিল, এবার তা ৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। আর এখন তা ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। তার মতে, বীজের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে চাষিদের জন্য আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
রাজশাহী শহরের গ্রেটাররোড এলাকার ব্যবসায়ী খোকন তালুকদার বলেন, বীজ আলু উৎপাদনে আমরা নিজেরাই নিয়োজিত, তবে এবছর প্রজেক্টের বীজ বিক্রি করা হচ্ছে বেশিরভাগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁ ও নাটোরে বীজের সংকট তৈরি হওয়ায় অনেক বীজ সেগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে, যার ফলে এখানকার চাষিদের জন্য বীজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কোল্ডস্টোরেজ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বক্কর জানান, বাজারে ৮০ টাকা প্রতি কেজির ওপরে বীজ আলু বিক্রি হচ্ছে এবং বীজের সংকটের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। রাজশাহীতে বীজ আলু কম হওয়া এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হতে পারে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ আলু মজুদ রয়েছে, এমনকি বিএডিসির বীজও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু কিছু অভিযোগ আসছে, যা নিয়ে আমরা প্রতিটি উপজেলায় কাজ শুরু করেছি এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামাল দিয়ে রোগবালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধ, বীজতলার মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং অসময়ের সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিতে নতুন সংযোজন ‘পলিনেট হাউজ’। গ্রিনহাউস’র আদলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাপনায় এই পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না।
এই পলিনেট হাউস প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।
তাই অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় পলিনেট হাউসে উৎপাদিত ফসলের দিকেই এখন আগ্রহ বেশি কৃষকদের। তবে এখনও সবখানে নেই ‘পলিনেট হাউস’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের বংপুরে গিয়ে দেখা যায় ‘কৃষি উদ্যোক্তা শামীমের ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এর অর্থায়নে নির্মিত পলিনেট হাউস।
এখানে শীতকালীন টমেটো, ফুলকপি ও কাঁটা বেগুন এবং চায়না বেগুনের বীজ বুনেছেন। আপাতত তিনি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এরপর অন্যান্য ফসল চাষের ব্যাপারেও ভাববেন। তবে পলিনেট হাউসের মধ্যে এই দুই মাসের মধ্যেই তিনি উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। আশপাশের কৃষকরা এখনই পলিনেট হাউসের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।
তারা এতদিন নিম্নমানের চারা ও মেয়াদোত্তীর্ণ চারা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতেন। কিন্তু তার এখান থেকে উন্নতমানের বীজের চারা পেয়ে অনেক খুশি। বাজারের চেয়ে দামও কম। তাই তাদের অনেকে এখন ব্যক্তি উদ্যোগেই এই পলিনেট হাউস নির্মাণের কথা ভাবছেন।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পলিনেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল রয়েছে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। ওপরে উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন থাকে। তাই এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়। এজন্য অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে সফলতা পাবেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, গোমস্তাপুর উপজেলায় এই প্রথম পলিনেট হাউস তৈরি হয়েছে। যা দেখে এখন শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আগ্রহী এবং উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, পলিনেট হাউসের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ফলবে তেমনি অফ সিজনে অন্যান্য সবজি উৎপাদন হবে। পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে। ফলে সবজি চাষে বৈচিত্র্যতা আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, নিরাপদ খাবার উৎপাদনের জন্য পলিনেট হাউজ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আদ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল সহজেই আবাদ করা যায়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে বালাইনাশকের ব্যবহার খুব সীমিত পর্যায়ে করা হয়ে থাকে। অল্প পরিসরে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে জেলার কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন হয়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে সুপারি বাগানে আদা চাষ করে সফল নারী উদ্যোক্তা ময়না বেগম। অভিনব পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ময়না বলছেন, এ পদ্ধতিতে সুপারির বাগানে আদা চাষে অন্য নারীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতে চাই।
এই নারী কৃষি উদ্যোক্তাকে দেখে অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ বলছেন, আদা একটি লাভজনক চাষাবাদ। সঠিক পরিকল্পনায় চাষ করলে ২ থেকে ৩ গুণ লাভ হতে পারে। পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমি অথবা যে জমিতে অন্য ফসল হয় না, সেই জমিতেও আদা চাষ করা সম্ভব। বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ কৃষকের কাছে একটি নতুন ধারণা। এভাবে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ যেমন পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারবে, একইভাবে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হবেন।
কৃষি উদ্যোক্তা ময়না বেগম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী এলাকার আজম আলীর স্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আনসার ভিডিপি’র একটি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি। সেখানে একদিন কৃষি অফিসার প্রশিক্ষণ দেন সুপারি বাগানে বস্তায় আদা চাষ করা যায়। আমার বাগানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, এগুলো অব্যবহৃতই থাকে। এই ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের চিন্তা থেকে বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে ফসল ফলানোর বিষয়টি মাথায় আসে। তখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেই। এক পর্যায়ে সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে ৩০ শতক জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। এতে আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
চাষের পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে ময়না বেগম আরও বলেন, আদা চাষে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং দানাদার কীটনাশক বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে বস্তায় ভরা হয়েছে। প্রত্যক বস্তায় তিনটি করে আদার গাছ আছে। সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে সারিবদ্ধভাবে রেখেছেন এক হাজার আট শত বস্তা। সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে এই পদ্ধতিতে ফলন বেশি হবে। আমি আশা করছি এই পদ্ধতিতে লাভবান হতে পারব। আমি প্রথম এই পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছি। এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের সুপারি বাগান আছে। আমি সফল হলে অন্যান্য নারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করব।
খরচের বিষয়ে তিনি জানান, ৩০ শতাংশ জমির সুপারির বাগানের ভিতর বস্তায় আদা চাষ করতে খরচ হয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। ৩৫ হাজার টাকার বীজ আদা কিনেছেন এবং জৈব ও রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ইত্যেমধ্যে তিনি ৩৫ হাজার টার আদা বিক্রয় করেছেন। আশা করছেন ভালো লাভ পাবেন। এখনও তিনি তিন লাখ টাকার আদা বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
ময়না বেগমের ছেলে শ্রেষ্ঠ বলেন, আমার মা আদা এবং চুইঝাল চাষ করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালান, আমরা দুই ভাই ঢাকায় পড়াশোনা করি। সব খরচ মায়ের কৃষি থেকে আসে।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, উপজেলার অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করছে। আশা রাখছি সুপারি বাগানে বস্তায় আদা চাষীগণ শতভাগ সফল ও লাভবান হবেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের সকল প্রকার সহায়তা করা হবে।
‘নিজ আঙিনায় করবো চাষ, সবজি খাবো বারো মাস’ স্লোগানে বিভিন্ন রকম শাক সবজি বীজ মাত্র ১০ টাকায় বিক্রির অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘যুবদের জন্য ফাউন্ডেশন’ ও ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’।
শনিনার (২৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী টাঙ্গাইল জেলা সদর বস্তি এলাকায় সবজি বীজ বিক্রি করেছে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। সাধারণ মানুষকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেন আয়োজকরা।
জানা যায়, সবজি বীজ বিক্রির এ উদ্যোগে লাউ, কুমড়া, শিম, টমেটো, মরিচ, মূলা, করলা, বরবটি, শশা, লাল শাক, পালং শাক, পুই শাকসহ প্রায় ১৫ রকমের শাক সবজি বীজ বিক্রি হয়েছে। একজন ক্রেতা তিন রকমের শাক সবজি বীজ ক্রয় করতে পেরেছেন মাত্র ১০ টাকায়।
সংগঠনের সমন্বয়কারী আরিফা জামান জানান, নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে সবজি বীজ পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগের আয়োজন। যাদের জমি নেই তারা বারান্দা বা ছাদে খুব অল্প জায়গায় যেন সবজি চাষ করতে পারেন সেজন্য হাইব্রীড বীজও বিক্রি করছেন তারা।
ক্রেতা মর্জিনা বেগম বলেন, ঘরের সাথে ছোট্ট একটু জায়গায় সবজি চাষ করবেন তিনি। এজন্য মাত্র ১০ টাকায় তিন রকমের সবজি বীজ ক্রয় করেছেন।
শিক্ষার্থী ইমরান সিকদার বলেন, বর্তমানে সবজির বাজারমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে নিয়মিত সবজি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্যই আজ স্বল্প মূল্যে সবজি বীজ সংগ্রহ করলাম। এখন থেকে বাড়িতে চাষ করবো।
সংগঠনের সমন্বয়কারী রকিবুল হাসান রায়হান জানান, আগামীতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রামে এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। নিজেদের সবজি নিজেরা চাষ করে যেন নিরামিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং প্রতিবেশিদেরও সবজি উপহার দিতে পারে।
১০ টাকায় সবজি বীজ বিক্রির উদ্যোক্তা ও সংগঠনের সভাপতি মুঈদ হাসান তড়িৎ জানান, বাজারে সবজির দাম বেশি হওয়ায় অনেক মানুষ সবজি কিনতে পারছেন না। সবজির দাম মানুষের নাগালে আনতে এবং নিজ আঙিনায় সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি বীজের প্যাকেটে ভর্তুকি দিয়ে আজ প্রায় দুই শতাধিক ক্রেতার নিকট সবজি বীজ বিক্রি করা হয়েছে।