নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাম আলু উৎপাদনে চাষিরা ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়ে আসছেন। এখন বাজারে আলুর দাম বেশি। তাই উপজেলার চাষিরা শুরু করেছেন আগাম আলু চাষ। স্বল্পমেয়াদী আগাম আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে সেই জমিতে আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। এ অঞ্চলের জমিগুলো একদম উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি। ভারী বৃষ্টিপাতেও সেখানে সহজে পানি জমে না। তাই পানি জমে আলু নষ্ট হওয়ার তেমন ভয় থাকে না। তা ছাড়া বর্তমানে আলুর বাড়তি দামের কারণে আগাম বাজার ধরার আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন। ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের বীজ আলু রোপণে কোমর বেধে লেগেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু চাষের আবহাওয়া অনুকূলে। আগাম আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতে আগাম আলু রোপণের জন্য জমিতে হালচাষ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ আলু সংগ্রহ ও রোপণে শত শত চাষি ও কৃষিশ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠের এত প্রাণচাঞ্চল্য নজর কাড়ছে সবার। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আগাম আলু রোপণ শেষ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এতে সদর ইউনিয়নের আলুচাষি লুৎফর রহমান লুতু ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমিতে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু রোপণ করছেন। অপরদিকে পুটিমারি ইউনিয়নের কালিকাপুর চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বি চৌধুরী টিপু ২০ থেকে ২২ বিঘা জমি, দুরাকুটি গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী ১৫ বিঘা জমিতে আগাম আলী রোপণ করবেন বলে জানান।
দুরাকুটি এলাকার আলুচাষি আকবর আলী বলেন, গত বছর আমি ১০ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপন করেছিলাম। সেখানে আগাম আলু চাষ করে কয়েক লক্ষ লাভ করেছি। তবে এবার সবকিছুর বাজারমূল্য বেশি রাসায়নিক সার, হালচাষ, কৃষকের দাম বেশি। এবার সবকিছুর দাম বেশি বিক্রিতে বাজার মূল্য বেশি না পেলে লোকসান গুণতে হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, এবছর ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আলু ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। আরও আশা করা যায় উপজেলায় ৪ শ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।
‘নিজ আঙিনায় করবো চাষ, সবজি খাবো বারো মাস’ স্লোগানে বিভিন্ন রকম শাক সবজি বীজ মাত্র ১০ টাকায় বিক্রির অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘যুবদের জন্য ফাউন্ডেশন’ ও ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’।
শনিনার (২৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী টাঙ্গাইল জেলা সদর বস্তি এলাকায় সবজি বীজ বিক্রি করেছে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। সাধারণ মানুষকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেন আয়োজকরা।
জানা যায়, সবজি বীজ বিক্রির এ উদ্যোগে লাউ, কুমড়া, শিম, টমেটো, মরিচ, মূলা, করলা, বরবটি, শশা, লাল শাক, পালং শাক, পুই শাকসহ প্রায় ১৫ রকমের শাক সবজি বীজ বিক্রি হয়েছে। একজন ক্রেতা তিন রকমের শাক সবজি বীজ ক্রয় করতে পেরেছেন মাত্র ১০ টাকায়।
সংগঠনের সমন্বয়কারী আরিফা জামান জানান, নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে সবজি বীজ পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগের আয়োজন। যাদের জমি নেই তারা বারান্দা বা ছাদে খুব অল্প জায়গায় যেন সবজি চাষ করতে পারেন সেজন্য হাইব্রীড বীজও বিক্রি করছেন তারা।
ক্রেতা মর্জিনা বেগম বলেন, ঘরের সাথে ছোট্ট একটু জায়গায় সবজি চাষ করবেন তিনি। এজন্য মাত্র ১০ টাকায় তিন রকমের সবজি বীজ ক্রয় করেছেন।
শিক্ষার্থী ইমরান সিকদার বলেন, বর্তমানে সবজির বাজারমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে নিয়মিত সবজি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্যই আজ স্বল্প মূল্যে সবজি বীজ সংগ্রহ করলাম। এখন থেকে বাড়িতে চাষ করবো।
সংগঠনের সমন্বয়কারী রকিবুল হাসান রায়হান জানান, আগামীতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রামে এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। নিজেদের সবজি নিজেরা চাষ করে যেন নিরামিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং প্রতিবেশিদেরও সবজি উপহার দিতে পারে।
১০ টাকায় সবজি বীজ বিক্রির উদ্যোক্তা ও সংগঠনের সভাপতি মুঈদ হাসান তড়িৎ জানান, বাজারে সবজির দাম বেশি হওয়ায় অনেক মানুষ সবজি কিনতে পারছেন না। সবজির দাম মানুষের নাগালে আনতে এবং নিজ আঙিনায় সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি বীজের প্যাকেটে ভর্তুকি দিয়ে আজ প্রায় দুই শতাধিক ক্রেতার নিকট সবজি বীজ বিক্রি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা আমন ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। পাকা আমন ধান ঘরে তোলার এখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে রোদ না হলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডা, সোনাবর ও শেরপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেক স্থানে পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে পাকা আমন ধান নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
গোমস্তাপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামের আকতার আলী বলেন, গতবছর ধানের ভালো দাম পাইনি। এসব নিয়ে হতাশায় ছিলাম। কিন্তু এবার ঝড়বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে তাদের চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। এক একর জমিতে আগে যেখানে প্রায় ৪০ মণ ধান পাওয়া যেত, এখন সেখানে ২৫ থেকে ৩০ মণ করে হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, যে সকল ধানগাছ নুয়ে পড়েছে কৃষকদের দ্রুত ধানগুলো কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিব।
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে নীলফামারীতে পাকা আমন ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। আর অল্প কিছুদিন পরেই এসব ধান কেটে ঘরে তোলার কথা। কিন্তু ঘরে তোলার সময় ধানগাছ নুয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।
তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ধানগাছ নুয়ে পড়লেও এতে তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টির প্রভাবে অনেক জায়গায় ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পাকা আমন ধানগাছও রয়েছে। এছাড়া যেসব গাছে এখনও ধান আসেনি সেগুলো কেটে গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে অনেককে।
নীলফামারীর টুপামারি এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘দু’দিনের বৃষ্টিতে এলাকায় অনেকের ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। আমার বাড়ির পাশে এবং বাড়ি থেকে একটু দূরে মোট দুই বিঘা জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। রাজশাহী স্বর্ণ ধানের বীজ লাগিয়েছিলাম। এই ধানের বীজগুলো অন্যান্য ধানগাছের চেয়ে লম্বা হয়েছিলো তাই এগুলো বাতাসে পড়ে গেছে।’
ডিমলা মধ্যম সুন্দরখাতা এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঝোড়ো হাওয়ার কারণে আমাদের গ্রামের প্রায় ২৫ বিঘা জমির ধান নুয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকার কৃষকেরা বেশ চিন্তিত। এখনো পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে কেউ নির্দেশনামূলক কিছু জানায়নি।’
ডোমার সদর ইউনিয়নের কৃষক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। আমাদের এলাকায় ঝোড়ো বৃষ্টির কারণে ৩০ বিঘার মতো জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এর মধ্যে যেগুলো ধান গাছে শীষ হয়েছে সেগুলো থোকা করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিলে ধানগুলো পাকার পর্যায়ে যেতে পারে। আর শুয়ে পড়া যেগুলো ধান গাছে ধান বের হয়নি এসব গাছে আর ধান হবার সম্ভাবনা নেই, এগুলো কেটে গরু ছাগলকে খাওয়াতে হবে।’
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, জমির ধান হেলে পড়ার বিষয়ে আমরাও খোজ নিচ্ছি। তবে তার পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা হয়নি। ঝড়ের কারণে জমির ধান হেলে পড়লেও সেটি উঠে যাবে। এতে ধানের ফলনে তেমন প্রভাব পড়বে না। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের ফলন অনেক ভালো হবার সম্ভবনা দেখছি।’
বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে বর্তমানে কৃষকদের মধ্যে ভারতের নাসিক অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত নাসিক-৫৩ পেঁয়াজ চাষের প্রতি আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। উচ্চ ফলনশীলতা, দীর্ঘ সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং বৃষ্টিপাত ও শুষ্ক জলবায়ুর সঙ্গে সহনশীলতার জন্য এই জাতটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এ বছরও এই অঞ্চলে ভারতীয় জাতের নাসিক-৫৩ পেঁয়াজ চাষ বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
চাষিরা বলছেন, নতুন পদ্ধতির এই পেঁয়াজ চাষ থেকে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। মাঠে মাঠে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের চারা দেখা দিতে শুরু করেছে, চারা দেখে আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজের যোগান নিশ্চিত করতে এই জাতের চাষ একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প। রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকেরা নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে লাভজনকতা আশা করছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতি এবং পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হতে পারে।
তারা বলছেন, এবার এই এলাকায় প্রথমবারের মতো নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে বড় কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। বিএডিসি থেকে পাওয়া এই বীজ কৃষি বিভাগ চাষিদের মাঝে বিতরণ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে পেঁয়াজের চারা রোপনে চাষিদের দম ফেলার সময় নেই। সারিবদ্ধভাবে পেঁয়াজ রোপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মাঠে-মাঠে সবাই দল বেধে লাইন করে সকাল থেকে বিকেল অব্দি। সবাই একসাথে পেঁয়াজের জমিতে বসে পেঁয়াজের চারা রোপন করছেন। এবার পেঁয়াজের দাম ভালো হওয়ায় জেলা জুড়ে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য সব ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষীরা।
তানোর উপজেলার চাষি বারিউল ইসলাম জানান, প্রথমবারের মতো তিনি ছয় বিঘা জমিতে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বিনামূল্যে সরবরাহকৃত বীজ থেকে চারা তৈরি করে গত ১৪ আগস্ট জমিতে রোপণ করেন।
তিনি বলেন, এই পেঁয়াজ চাষের জন্য কিছুটা উঁচু জমি এবং বেলে, দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। সেচের ব্যবস্থাও রাখতে হয়। জমিতে এক ট্রাক নদীর মাটি এবং এক ট্রলি করে জৈব সার প্রয়োগ করেছি। এখন পর্যন্ত রোগবালাই দেখা যায়নি। আশা করছি, নভেম্বরের শেষের দিকে পেঁয়াজ তোলা শুরু করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বিঘায় প্রায় ১২০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। যদিও ৮০ মণ পেঁয়াজ পেলেও লাভ হবে প্রায় এক লাখ টাকা। প্রতি বিঘায় খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকা। এমনকি বাজারে মণপ্রতি দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও ভালো লাভ হবে।
গোদাগাড়ী উপজেলার চাষী মো. আব্দুল করিম জানান, নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে আমি গত বছর থেকে শুরু করেছি। এ জাতের পেঁয়াজের চারা মজবুত এবং ফলনও ভালো হচ্ছে। এছাড়া, এ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সহজ এবং ভালো দামও পাচ্ছি, যা আমার পরিবারের আয়ের সহায়ক।
বাঘা উপজেলার আরেক চাষী হুমায়ুন কবির বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে, তবে নাসিক-৫৩ জাতের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই জাতের পেঁয়াজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, ফলে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আগামীতে আরো জমিতে এ জাতের পেঁয়াজ লাগানোর পরিকল্পনা করছি, কারণ এর বাজারমূল্য অনেক ভালো।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দফতরের হিসাবে, ২০২০-২১ মৌসুমে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাত্র ২০০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। এরপর ২০২১-২২–এর খরিপ-১ মৌসুমে চাষ হয় ৫০০ বিঘা। আর খরিপ-২ মৌসুমে চাষ হয় ৫ হাজার ২০০ বিঘা।
২০২৩-২৪–এর খরিপ-১ মৌসুমে ৫ হাজার ২০০ ও খরিপ-২ মৌসুমে ৬ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়। এবার ২০২৪-২৫–এর খরিপ-১ মৌসুমে চাষাবাদ আড়াই গুণ বেড়ে ১৩ হাজার বিঘা জমি হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ২০টন পেঁয়াজের উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে আগে শুধু শীতকালেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হতো। ২০২০-২১ মৌসুম থেকে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ। নাসিক-৫৩ জাতের ভারতীয় এ পেঁয়াজের বীজ আমদানি করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ওই পেঁয়াজ প্রণোদনে হিসেবে বিনা মূল্যেই চাষিদের সরবরাহ করা হয়। এই বীজ থেকে চারা করে পেঁয়াজ চাষে ভালো লাভ করছেন চাষিরা। তাই বাড়ছে চাষাবাদ।
রাজশাহী বিএডিসির উপপরিচালক কে এম গোলাম সরওয়ার বলেন, ভারতে প্রচুর পরিমাণে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, যা আমাদের দেশে ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বীজ বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে এই পেঁয়াজের বীজ আমদানি করা হচ্ছে এবং প্রণোদনা হিসেবে চাষিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিরা ভালো লাভ পাচ্ছেন বলে এই জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, আগে দেশে শুধু শীতকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হতো। কিন্তু এখন গ্রীষ্মকালেও নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। এতে পেঁয়াজ উৎপাদন অনেক বেড়েছে এবং অসময়ের কারণে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। চাষিরাও এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চাষের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে।