কৃষি পণ্যের অবাধ আমদানি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোগ বালাইয়ের

  • তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলা ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি, কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বিতরণসহ ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বাংলাদেশের কৃষির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার  অন্যের সংস্থানের জন্য একদিকে বিদেশ থেকে কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শষ্য বীজ ও আমদানি করতে হচ্ছে। বাজারে দেশীয় বীজের সরবরাহ একেবারেই কম। আগে হাট বাজারে দেশি শস্যের বীজ মিললেও এখন তা দুষ্প্রাপ্য। দেশীয় উৎপাদনে চাহিদা মেটাতে না পেরে চায়না, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও কৃষিপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। 

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম কে জানান, আমরা আমাদের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষি পণ্য আমদানি করলেও আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দেয়া হয়  না। ফলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমরা সমসময়ে  পরিবেশের কথা চিন্তা করে কাজ করি।  কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের রোগ জীবানু ছড়িয়ে  পরার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক সময়ে ফসলে নতুন পোকা বা ফসলের রোগ দেখী যা আমাদের ছোট সময়ে  দেখি নি। অনেক সময়ে বিদেশ থেকে  আনা বীজে ফসল না হওয়ার  ঘটনাও ঘটেছে। বিদেশি কোনো কৃষিজ পণ্য আমদানি আগেই পণ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগকালীন প্রয়োজন হয় খাদ্য বা  কৃষি পণ্য আমদানির। তাছাড়া সব ফসল, ফল-মূল জলবায়ুজনিত কারণে আমাদের দেশে উৎপাদন সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় কৃষি পণ্য আমদানির। উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজন সর্তকতা। পণ্য আমদানিতে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা না হলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

 কৃষিমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পৃথিবীর সব দেশেই কৃষি পণ্য আমদানি ও রফতানির কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে বর্তমানে ০২টি সমুদ্রবন্দর, ০৩টি বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, ০১টি নৌবন্দর ও আইসিডি কমলাপুরের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও কয়েকটি কোয়ারেন্টিন স্টেশন রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমদাননি কৃত পণ্যের সাথে পরিবাহিত হয়ে ধ্বংসাত্মক পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের জীবাণু দেশের অভ্যন্তরে বা আমাদের দেশ  থেকে অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধ করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বা প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন। 

তিনি আরো বলেন,  বাংলাদেশে আমদানি রফতানি প্রায় ৯২শতাংশ সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামের মাধ্যমে হয়ে থাকে।  বিদেশ থেকে আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।