মবিলে মুখ পুড়লো কার?

  • তুষার আবদুল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তা২৪

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তা২৪

এক কলেজ বন্ধু ফোন দিয়ে বললো-পথে মুখোশ নিয়ে বের হতে। কারা নাকি মুখে পোড়া মবিল, আলকাতরা মেখে দিচ্ছে। বিচলিত হলাম না। মুখোশ নতুন করে পড়ার কি আছে? মুখে মুখোশ নিয়েইতো ঘুরে বেড়াচ্ছি। মবিল মাখালে মাখিয়ে দিক। মুখোশ চেহারা জ্বলে পুড়ে যাক। আড়ালে যেই মুখ, তা কি আর দেখাবার মতো আছে? আত্মপ্রতারক, নতজানু, আপোষে বিক্ষিপ্ত মুখগুলো দেখাবার মতো নেই। সবার মুখেরই এক হাল। তবু ভাবি, অন্যেরা হয়তো সুন্দর মুখশ্রী নিয়েই আছে। সত্য হলো সবাই তার অবয়ব হারিয়েছে। কে যে কার কাছে হারালো সেই হিসেব নিজ নিজ হালখাতায় পাওয়া যাবে। কিন্তু সবাই যখন অবয়ব হারা, তখন জাতির মুখের হাল কি? আজ সেই জবাবও দিয়ে দিলো পরিবহন শ্রমিকেরা।

আমাদের সন্তানরা পথে নেমেছিল দুই সহপাঠীকে হারিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। সরকার কিশোর-কিশোরীদের সেই দাবি বা আন্দোলনকে আমলে নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮ পাস করে। পরিবহন শ্রমিকরা সেই আইন মানতে চাইছে না। তাদের জরিমানা কমাতে হবে, শাস্তি কমাতে এবং ৫ম শ্রেণি পাসকেও চালকের লাইসেন্স দিতে হবে এই দাবিসহ আটদফা দাবিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকে। যদিও তাদের নেতা-মহানেতারা বলছেন ধর্মঘট নয় কর্মবিরতি। এর আগেও তারা যখন তখন বিশ্রাম, অবসর এবং কর্মবিরতিতে গেছেন। সুতরাং যাত্রী সাধারণ ধরে নিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টা দুর্ভোগ সহ্য করে তাদের গন্তব্যে যেতে হবে। দূরপাল্লার যাত্রীদের অনেকের যাত্রা বাতিল করতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই কর্মবিরতির সকাল শুরু হলো। বিশেষ করে রাজধানীর ভেতরকার এবং আশপাশের মানুষেরা মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত বাহন এবং অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহনের উপর ভরসা করে পথে নামলেন। পথে নেমেই শ্রমিকদের হাতে অপদস্ত, অপমানিত হতে হলো তাদের। ঐ বাহনের চালকেরাতো বটেই, যাত্রীরাও শ্রমিকদের হামলার শিকার হলেন। স্ত্রীর সামনে স্বামী, সন্তানের সামনে বাবা, কোথাও কোথাও নারীদেরও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। শ্রমিকরা বাহন চালক, যাত্রীদের মুখে আলকতারা, পোড়া মবিল মেখে দিলো। স্কুল-কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্মও রক্ষা পায়নি। সঙ্গে চলেছে অশ্লীল গালি। এসব কিছুই তারা করছে পুলিশের সামনে। পুলিশ এখানে নিরব দর্শক। তারা বাধা দিতে আসছেন না। অথচ আমাদের ছেলে মেয়েরা যখন ভদ্রতার সঙ্গে, সালাম দিয়ে গাড়ির কাগজ পত্র যাচাই করছিল। সড়কে আলাদা লেন তৈরি করে দিচ্ছিল, সেই কাজ সইতে পারেনি পুলিশ বাহিনী। নিজেরা এবং বহিরাগত শ্রমিক, রাজনৈতিক সংগঠনের ক্যাডার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সন্তানদের ওপর। এখন যখন শ্রমিকরা আলকতারা মেখে দিচ্ছে, তখন পুলিশের সেই সহযোগী বাহিনীরাই বা কোথায়। উত্তর আসতে পারে তারাও কর্মবিরতিতে আছে!

বিজ্ঞাপন

সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী বলছেন, এই সরকারের পক্ষে এখন আর আইন সংশোধন পরিবর্তন সম্ভব নয়। সংসদ অধিবেশন শেষ। নতুন সরকার ও সংসদ এসে সিদ্ধান্ত নেবে। অতএব দুদিনের ধর্মঘট বা কর্মবিরতিতে সরকারের নমনীয় হবার আপাতত সম্ভাবনা দেখছি না। তবে শ্রমিক নেতা ও নৌ মন্ত্রী আবারো অবাক করেছেন দেশবাসীকে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন- ধর্মঘটের কথা তার জানা নেই। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও যোগাযোগের বিষয়টি নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিবহন শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অবসরে গেছে বলা এবং নিজ হাসির জন্য তিনি একাধিকবার সমালোচিতও হয়েছেন। পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিকরা আপন শক্তির চেয়ে এই মন্ত্রীর শক্তিতে অধিক বলবান বলেও রাজনীতির বাজারে কথা চালু আছে। কথা কতোটা সত্য তার প্রমাণও নিজের বচন ও মুখাভঙ্গী দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন।

কিন্তু এর দায় কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা সরকারের কাঁধে চাপাতে চাই না। কারণ সেই ব্যবস্থাপত্র কোনো সমাধান এনে দেবে না। বরং এখন বলা ভালো দিনের পর দিন আমরা সকলে পরিবহন খাতের নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিয়ে গেছি। আমাদের সন্তানরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও আমরা চোখ বুঁজে আছি। আর নয়, আমাদের চোখ খোলা রাখতেই হবে। এবং রাজনৈতিক দল গুলোকে বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বলতে চাই- ভোটের জন্য কোনো একটি বিশেষ খাতের কাছে জিম্মি না হয়ে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের জীবন যাপন দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা মুক্ত রাখুন। দেখবেন সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে, তাদের পরিচালনার দায়িত্ব আপনাদের হাতেই তুলে দেবে। সাধারণের সরল মন প্রতারণা করে না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি