পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হল মূল সেতুর ৪৫০ মিটার কাঠামো। রোববার ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের ওপর তৃতীয় স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ৭সি স্থাপন করা হয় বলে সেতু প্রকল্পে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। সকাল ৬টা থেকে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়। ৯টার দিকে পিয়ারের ওপর স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সেতু। এর আগে শনিবার বিকালে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ার এলাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যান ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের সামনে পজিশন অনুযায়ী আনা হয়। এরপর লিফটিং ক্রেনের সাহায্যে অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর রাখা হয়েছে স্প্যানটিকে। তবে স্থায়ীভাবে বসতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এর আগে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে দুটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৩০০ মিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়। প্রথম স্প্যানটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয়টি গত ২৮ জানুয়ারি পিয়ারে বসানো হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২ পিয়ারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার আঠারখাদা গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে দুপুরে পাড়ার মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়ে শিশু দুজন নিখোঁজ হয়েছিল। নিহত দুই শিশু আঠারখাদা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সামিউল্লাহ ওরদে তাসিফ (৮) ও একই এলাকার হুমাউনের ছেলে হুজাইফা (১০)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে তাসিফ ও হুজাইফা পাড়ার একটি মন্দিরে পূজা দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে দুই পরিবারের সদমস্যরা তাদের আর কোনো খোঁজ পায়নি। সন্ধ্যায় বাড়ি না ফিরলে দুই পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা তাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামেই মাথাভাঙ্গা নদীতে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ আঠারখাদা গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া উপহারের স্বর্ণের মুকুট চুরির ঘটনায় পুরোহিত দিলীপ মুখার্জীসহ অন্তত আটজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঘটনার পর থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হেফাজতে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, চুরি যাওয়া স্বর্ণের মুকুট উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে, বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ ও পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
স্বর্ণের মুকুট চুরির সাথে জড়িত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্যামনগরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুটটি বৃহস্পতিবার দিবালোকে চুরি হয়েছে। স্বর্ণের মুকুটটির বিষয়ে যে কোনো তথ্য কিংবা কোনো ব্যক্তি এটি বিক্রয় অথবা কোনো স্বর্ণের দোকানে গলানো/ধরন পরিবর্তন করতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা (০১৭১৫-২১২২৭৭) ও পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা (০১৩২০-১৪২১০০) কে জানাতে অনুরোধ করা হলো।
অপরদিকে, মুকুট চুরির ঘটনায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্ত পূর্বক তা উদ্ধার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, মুকুট চুরির ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি। তবে ফুটেজে দৃশ্যমান যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মন্দিরের পুরোহিত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। মন্দির কমিটির নেতারা ঢাকায় থাকেন। এ জন্য চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
শ্যামনগরে এসে তারা মামলা করবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৪৭ মিনিট থেকে ২টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে এক যুবক মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমার মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুট খুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেছে ধরা পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মন্দিরের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে মুকুট চুরির সঙ্গে জড়িত ওই যুবক স্থানীয় নয়। শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সীমান্ত এলাকায় তার ছবি ছড়িয়ে দিলেও কোনোভাবে তাকে কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। সিসি ক্যামেরায় জিন্সের প্যান্ট ও সাদা টি-শার্ট পরিহিত যুবকের একার ছবি ধরা পড়লেও চুরির ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন বলে তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ শ্যামনগর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অনাথ মন্ডল বলেন, নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার সুযোগে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেনি। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটানো হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন করেন। যশোরেশ্বরী কালী মন্দির সনাতন ধর্মের ৫২ পিটের এক পিট। ওই দিন নরেন্দ্র মোদী নিজ হাতে কালীপ্রতিমার মাথায় স্বর্ণের মুকুট পরিয়ে দেন।
এডিস মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে চলতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে।
এছাড়াও গত একদিনে নতুন করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৪৯০ জনের। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৯৫ জনে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ২০৫ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন এবং রংপুর বিভাগে ৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৮৯৫ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ২০১ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী।
২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। অপরদিকে এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন। যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।
যশোরের বেনাপোলে নিখোঁজের একদিন পরে অহিদুল ইসলাম (৩৪) নামে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু না পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে।
নিহত অহিদুল ইসলাম বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও পেশায় দিন মজুর ছিলেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে বেনাপোল সীমান্তের চাত্রের বিল এলাকার আক্তার মাহমুদ বাবলুর মাছের ঘের ঘের থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল সে। সে ওই মাছের ঘেরে গার্ডের কাজ করতো।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে বেনাপোল পোর্টথানায় একটি অপমৃত্যু দায়ের করে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে নতুন করে মামলা হবে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত অহিদুল ইসলাম ছোটআঁচড়া পূর্ব পাড়া এলাকার নিছার আলী খোকনের ছেলে। তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মাঝের ঘেরে কাজ করছিল। এদিন বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের সদস্য খোঁজাখুঁজি করে। পরের দিন শুক্রবার বিকালে মাছের ঘেরের পানিতে মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অহিদুলের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে আপাতত অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী আবারো নতুন করে মামলা করা যাবে।
নিহতের স্ত্রী জানান, সে যে ঘেরে কাজ করে সেখানে কিছু মানুষ তাকে কয়েকদিন ধরে হুমকি দিচ্ছিল। এর দু'দিন পর তার এই মৃত্যু হয়। সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় কবীর হোসেন জানান, নিহতের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা এখন পরিবার।
বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন জানান, নিহত যুবক স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য। এটি যদি হত্যার ঘটনা হয়, তবে তার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।