নতুন কলকাতার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে একুশের স্পন্দন
নিউটাউন (কলকাতা) থেকে: ঔপনিবেশিক আড়মোড়া ভেঙে সুপ্রাচীন কলকাতা আসলেই নতুন ভাবে জেগে উঠেছে পূর্বাংশের বিধাননগরে। সল্টলেক, নিউটাউন, লেকটাউন উপশহরগুলো প্রাগৈতিহাসিক কলকাতার ঝাঁ চকচকে তম্বি সংস্করণ।
সুপরিকল্পিত নগরায়নের নতুন কলকাতায় প্রাধান্য পেয়েছে মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট হাউস, আইটি প্রতিষ্ঠান আর বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো। তথাপি সেখানেও শিল্প-সংস্কৃতির আয়োজন রাখতে ভুল করেন নি কলকাতার নগরকর্তাগণ। বাংলা সংস্কৃতির দুই দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলাম নতুন কলকাতার নিউটাউনে মহা সমারোহে সমাসীন।
উত্তর প্রান্তের কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নিউটাউন পেরিয়ে যে প্রধান সড়ক সল্টলেক হয়ে দক্ষিণে গিয়েছে, তার নাম 'বিশ্ব বাংলা সরণি'। এটিই নিউটাউনের দু পাশের একধিক ব্লক, এভিনিউ যাওয়ার মাধ্যম।
'বিশ্ব বাংলা সরণি'র উত্তর মাথায় 'রবীন্দ্রতীর্থ' আর দক্ষিণ প্রান্তে 'নজরুলতীর্থ'। কয়েক একক জায়গা নিয়ে এই সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স দুটি বাঙালির নান্দনিক তীর্থ যেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গান, রচনা ও যাবতীয় কাজের মিউজিয়াম, প্রদর্শনী, লাইব্রেরি, প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে তীর্থের অভ্যন্তরে। যারা গবেষণা করতে চান, তাদের থাকা-খাওয়ার সুলভ বন্দোবস্ত রয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠানে।
কলকাতার 'নজরুলতীর্থ'-এ এই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা হবে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। 'সীমানা ভুলে একই সুরে, রবীন্দ্র-নজরুলে' শিরোনামের অায়োজনে বাংলাদেশ ও ভারতের ৩০০ শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক অংশ নেবেন বলে জানান উদ্যোক্তা ছায়ানট কলকাতা।
অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পক-পরিচালক, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বার্তা২৪.কমকে জানান, 'এই অনুষ্ঠান থেকে বাংলা সংস্কৃতি ও বাঙালির মৈত্রী, সম্প্রীতি ও কল্যাণ বার্তা ঘোষিত হবে।'
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিউটাউনের 'নজরুলতীর্থ' সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও শেষ মুহূর্তের মহড়া চলতে দেখা গেলো। 'নজরুলতীর্থ' থেকে অম্লান বাংলা ভাষার কথা, সুর, রঙ, সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার তরুণদের মহান আত্মত্যাগের স্পন্দন ছুঁয়ে যাচ্ছে বাংলার আরেক প্রান্তের কলকাতায়। কলকাতার নতুন শহরের বাসন্তী এভিনিউয়ে ঢাকার পলাশ-শিমূলের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে দিচ্ছে চিরায়ত বাঙালির সত্তা ও চেতনা।