র্যাবের অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার পর ভেজাল মিশ্রিত সরিষার তেল ‘পুষ্টি’ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার দাবি করেছে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সরিষার তেল তুলে নেওয়ার দাবি করা হলেও গ্রাম পর্যায়ে আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে। শহর পর্যায়েও এখনো বেশকিছু দোকানে সরিষার তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সয়াবিন তেল শহর-গ্রাম সব জায়গায় বিক্রি হচ্ছে আগের মতই। তেল ক্রেতা, দোকানদার ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ তেল নিয়ে পাইপ লাইনে দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আবার বাজারে ছাড়ার অভিযোগে ৭৫ লাখ টাকার জরিমানা করা হয় টি কে গ্রুপকে। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসে বাজার থেকে পুষ্টির সরিষার তেল তুলে নেওয়ার। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় অনলাইন মাল্টিমিডিয়া বার্তা২৪.কম এ। এরপরও প্রায় আগের মতই ভেজাল মিশ্রিত তেল বিক্রি করে যাচ্ছে টি কে গ্রুপ।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বাজারের ভেজাল তেল প্রায় আশিভাগ তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে সরেজমিনে এখনো বাজারে পাওয়া গেছে পুষ্টির ভেজাল তেল।
ক্রেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, পুষ্টি সয়াবিন তেল কারখানায় ভেজাল হলে বাজারের তেল কিভাবে খাঁটি হয়? কীভাবে ভেজাল মিশ্রিত তেল বাজারে দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে টি কে গ্রুপ।
বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেছেন, রাজধানীসহ সারাদেশের মার্কেট ও সুপার শপগুলোতে এখনো বিক্রি হচ্ছে পুষ্টি সয়াবিন তেল। জরিমানা দিয়ে ভেজাল মিশ্রিত পুষ্টি সয়াবিন তেল কি খাঁটি হয়ে গেল? এমন হাজারো প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারা।
ভেজাল প্রমাণিত হওয়ায় পুষ্টির সরিষা তেল বাজার থেকে তুলে নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর রাজধানীর কিছু কিছু মার্কেট থেকে তেল ফেরত নিতে শুরু করেছে টি কে গ্রুপ। তবে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৫ মে) রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে দোকানগুলোতে এখনো পুষ্টির সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সরিষার তেলের বোতল রেখে দেওয়া হয়েছে।
কাওরান বাজার এলাকায় বাজার করতে আসা জাহিদুল ইসলাম নামের এক ভোক্তা অভিযোগ করে বলেন, সেদিন টিভিতে দেখেছি পুষ্টি সয়াবিন তেলের কারখানায় মেয়াদোত্তীর্ণ তেল প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে সরবরাহ করছে। তাহলে আমরা এতদিন যে তেল খেয়েছি সেটা ভেজাল ছিল। এর জন্য আসলে তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ওই দিন দেখার পর আমি আর পুষ্টি সয়াবিন তেল কিনছি না, কিন্তু সবাই তো আর আমার মত সচেতন না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বাজার থেকে ভেজাল তেল তুলে নেওয়া।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনার বার্তা২৪.কম এর পক্ষ থেকে এনিয়ে যোগাযোগ করা হয় একটি জেলার পুষ্টির ডিলারের সঙ্গে।
সেই ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুষ্টির সরিষার তেল। তবে আমাদের এখানে সেভাবে সরিষার তেল চলে না। যে দুই এক কার্টন আছে সেগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে সয়াবিন তেল বাজারে আগের মতই রয়েছে।
এ বিষয়ে টি কে গ্রুপের হেড অব ব্রান্ড অ্যান্ড কমিনিউকেশন্স ইব্রাহিম খলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের সরিষার তেল বাজার থেকে তুলে নেওয়া শুরু করেছি। গত কয়েক দিনে প্রায় ৮০ শতাংশ তেল বাজার থেকে তুলে নিয়েছি। তবে সয়াবিন তেলে যেহেতু কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই তাই সেগুলো বাজারের আগের মতই আছে।
তবে এই মুহূর্তে বাজারে কি পরিমাণ পুষ্টির সয়াবিন তেল রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। তবে তারা প্রতিদিন কয়েক লাখ কার্টন সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ছে বলেও জানান।
উল্লেখ্য, গত ৫ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় পুষ্টি সয়াবিনের একটি কারখানায় র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ তেল বাজারজাত করণের দায়ে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।