ফেলোশিপের নামে আমেরিকায় মানবপাচার বিজিএমইএ’র!

  • ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিজেএমইএ ভবন

বিজেএমইএ ভবন

চট্টগ্রাম পটিয়ার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বিজিএমইএ’র জার্নালিজম ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ নিয়ে ২৩ জুন এক সপ্তাহের জন্য শিক্ষা সফরে আমেরিকায় যান। তবে মফিজুলের এক সপ্তাহ আজও শেষ হয়নি। অবৈধ বাসিন্দা হয়ে আমেরিকাতেই রয়েগেছেন তিনি। আর এই সু-ব্যবস্থা মফিজুল ইসলামকে দিয়েছেন খোদ বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির বলে অভিযোগ উঠেছে।

মফিজুল ইসলাম চৌধুরী ও বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরের গ্রামের বাড়ি পটিয়াতে। একই এলাকার ছেলের আবদার রাখতেই নাকি বিজিএমইএ’র এই সহ-সভাপতি ফেলোশিপের ছয় জনের তালিকায় মফিজুল ইসলামকে রাখেন। এর জন্য নির্বাচক কমিটির সঙ্গে তার কথাও হয়। নাসিরের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে মূলধারার সাংবাদিকতা না করেও পেয়ে যান বিজিএমইএ‘র ফেলোশিপ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের মূলধারার কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর নামে বিভিন্ন সময় সিনিয়র সাংবাদিকদের কাছে নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে। তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সময় টাকা নিতেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

তবে মফিজুল ইসলামের নামে এমন অভিযোগ খুব স্বাভাবিক বিষয় বলে জানান প্রথমসারির একটি জাতীয় দৈনিকের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি। এ ধরনের অভিযোগ থাকার পরও বিজিএমইএ’র মতো সংগঠন কি করে মফিজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফেলোশিপ দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে যেতে পারে-বিষয়টি নিয়ে অবাক চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকরা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/04/1536068509744.jpg

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিজিএমইএ-এর এক কর্মকর্তা জানান, ফেলোশিপের জন্য আবেদন ঘোষণার পরপরই মফিজুল ইসলাম চৌধুরী মোহাম্মদ নাসিরের বাসায় যোগাযোগ করেন এবং তাকে ফেলোশিপ দিতে অনুরোধ করেন। শুধু তাই নয় ফেলোশিপ পাওয়ার পর মফিজুলের ভিসার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ নাসির। কারণ, এর আগে মফিজুল ইসলাম চৌধুরী তেমন কোনো দেশ ভ্রমণও করেননি বা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ছিলো না।

অন্যদিকে ফেলোশিপ পাওয়া নারী সাংবাদিক ৭১ টিভির স্টাফ রিপোর্টার কাবেরী মৈত্রেয় দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি মূলধারার সাংবাদিকতা করে আসলেও আমেরিকার ভিসা পাননি। কাবেরী মৈত্রেয়-এর মতো সামনের সারির সাংবাদিকরা যখন ভিসা পান না- তখন কোন শক্তির বলে মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো নামেমাত্র সাংবাদিকরা ভিসা নিয়ে আমেরিকায় গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আঙুল তুলছেন মোহাম্মদ নাসিরের দিকেই।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে চট্টগ্রামের এক গণমাধ্যম কর্মী বলেন, মফিজুল ইসলাম চৌধুরী আমেরিকাতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে তিনি নিরাপদ নয় বলে মনে করেছেন।

মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর আমেরিকায় গিয়ে না ফেরা, দেশের নামে বদনাম করে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টার পেছনে নিজের দায় মানতে নারাজ বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বিজিএমইএ-এর ফেলোশিপ নিয়ে আমেরিকায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন এ দায় তো আমার নয়। আর ফেলোশিপের নির্বাচন কমিটিতে তো আমি ছিলাম না। এখানে আমার কিছু করার নেই। তবে মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর আমেরিকায় গিয়ে না ফেরায় তার নেতিবাচক প্রভাব তো আমাদের ওপর পড়বেই।

বিজিএমইএ এর ফেলোশিপ নিয়ে আমেরিকায় যাওয়া অন্য চার সাংবাদিক হলেন, দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার আবু হেনা মুহিব, ডেইলি সানের স্টাফ করেসপেন্ডেন্ট জসিম উদ্দিন, এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ হাসানুল আলম শাওন, কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরোর রাশেদুল তুষার।

চলতি বছরের ২৩ জুন পাঁচ সাংবাদিক আমেরিকায় যান। ৬ জুলাই চারজন ফিরে আসলেও ফেরেননি মফিজুল ইসলাম চৌধুরী।