প্রথম টেস্টে ব্যাটিং ঝলক দেখিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টেই ছন্দপতন। সেই পুরনো ব্যর্থতার গল্প। দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ধসের পর ২০৯ রানের বড় ব্যবধানে দুঃস্বপ্নের হার। শুধু ম্যাচই হারেনি। দুই টেস্টের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হাতছাড়া করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
প্রথম টেস্টে বিস্ফোরক ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তামিম ইকবাল (৯০, ৭৪*), নাজমুল হোসেন শান্ত (১৬৩), মুমিনুল হক (১২৭), মুশফিকুর রহিম (৬৮) ও লিটন দাস (৫০) দাপুটে ব্যাটিং করে গেছেন। আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের নামের পাশে প্রথমবারের মতো যোগ হয়েছে ২০ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং খারাপ হলেও প্রথম ইনিংসে তামিম ৯২ রানের দুরন্ত এক ইনিংস খেলেন। বোলার দাপুটে বোলিং করেছেন। পেসার তাসকিন আহমেদ ফর্মে ফিরেছেন।
তাই তো এই সিরিজ থেকে প্রাপ্তির অনেক কিছু খুঁজে পাচ্ছেন ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। সোমবার ম্যাচ শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অবশ্যই প্রাপ্তির কিছু না কিছু আছে। সিরিজ হেরেছি মানে এটা না যে, সব কিছু হেরে গেছি। সমালোচনা হবে, অনেকেই কথা বলবে। কিন্তু এরপরও আমার কাছে মনে হয়, অনেক ইতিবাচক দিক আছে।’
প্রথম টেস্টে দুরন্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে টাইগাররা। বিশেষ করে তামিম ইকবাল, নাজুমল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসরা। দ্বিতীয় টেস্ট সেটা হয়নি। সেই ব্যর্থতার আক্ষেপ ঝরে পড়ল টাইগার ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে, ‘শেষ টেস্টে দলগতভাবে আমরা খেলতে পারিনি। প্রথম টেস্টে আমরা দল হিসেবে খেলেছি। আমরা তখনই ভালো খেলি যখন আমরা দলগতভাবে খেলি। যখন সবাই অবদান রাখে, তখনই আমরা দলীয়ভাবে ভালো করি।’
টস ভাগ্য সহায় হয়েছিল প্রথম টেস্টে। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। পিচের ব্যাটিং সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যায় অনেকটা দূর। সেই দূরত্বটা ছোঁয়া বাংলাদেশের জন্য দুই ইনিংসেও সম্ভব হয়নি। মাঠের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমনটাই বললেন মুমিনুল, ‘এই টেস্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টস। এটা আমার মত। প্রথম দুই দিনে উইকেটে বোলাররা কোনো সহায়তা পায়নি। ম্যাচের ৫০ শতাংশ ভাগ্য ঠিক হয়ে গিয়েছিল টসের সময়েই।’
নাজমুল হোসেন শান্তদের মতো নতুন ক্রিকেটারদের লাল বলের ক্রিকেটে ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগবে বলেই মনে করেন মুমিনুল, ‘ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থেকে টেস্ট ক্রিকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন। টেস্ট ক্রিকেটে একটু সময় লাগে। একটু সুযোগ দিতে হবে। দলে নতুন কেউ এলে সাথে সাথে ফল পাওয়া কঠিন। টেস্ট ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরা আরও একটু সময় পেলে নিজেদের গড়ে তুলবে।’
দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। বোলিংয়ে হারানো ধারটা খুঁজে পেয়েছেন। লঙ্ক সফরে দুরন্ত বোলিংয়ে সেটার প্রমাণও রেখেছেন এ তারকা পেসার। তাইতো তাসকিনের স্তুতি গাইলেন মুমিনুল, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এটা দেখার যে কোনো পেসার কিছু করতে পারছিল কিনা। সেই হিসেবে তাসকিনকে দেখেছেন। আগের চেয়ে অনেক ভালো এখন। অনেক উন্নতি করেছে। সব মিলিয়ে অনেক ইতিবাচক দিক ছিল এই টেস্ট সিরিজে।’
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অনেকগুলো ম্যাচ খেললেও জয় এখনো ধরা দেয়নি। প্রাপ্তি বলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের ড্র। সেখান থেকেই এসেছে ২০ পয়েন্ট। কিন্তু এটা নিয়ে সন্তুষ্ট নন মুমিনুল।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দলের কোনো উন্নতি চোখে পড়ছে না টাইগার অধিনায়কের, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা যত ম্যাচ খেলেছি মনে হয় না, আমাদের কোনো উন্নতি হয়েছে। করোনাকালে এক বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছি। সেই সিরিজের ১০ দিনের মধ্যে মাত্র দুটি দিন আধিপত্য বিস্তার করতে পারিনি। সেই দুই দিনেই ম্যাচ হেরেছি।’
দ্বিতীয় টেস্টে ফলো-অনে পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সে পথে না হেঁটে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে পড়ে। তাই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রাপ্তির ঝুলি সমৃদ্ধ করতে না পারার কষ্টটা ঠিকই জ্বালিয়ে মারছে মুমিনুলকে, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে আমরা ভালো খেলেছি। দ্বিতীয় টেস্টে বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। আর ব্যাটসম্যানরা ধসে পড়েছে। আমরা হয়তো বা ২০ পয়েন্ট পেলাম। কিন্তু মনে হয় না খুব ভালো প্রাপ্তি আছে।’