৪৩৭ রানের মহা চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। চতুর্থ ইনিংসে এমন পাহাড়সম লক্ষ্য ছোঁয়া বড়ই অসম্ভব। তারপরও অবিশ্বাস্য কিছুর আশায় ব্যাটিং লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে গেছে টাইগাররা। কেননা প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থতার গল্প লিখছে মুমিনুল হকের দল। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে আলোর স্বল্পতার কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৭ রান সংগ্রহ করতে গিয়েই টাইগাররা হারিয়ে ফেলেছে ৫ উইকেট। অতিথিরা এখনো ২৬০ রানে পিছিয়ে।
পঞ্চম ও শেষ দিনে শেষের পাঁচ উইকেট নিয়ে এত বড় ঘাটতিটা পূরণ দুঃসাধ্যই বটে। তাই ম্যাচের সঙ্গে সিরিজ বাঁচাতে হলে এখন সফরকারীদের দরকার প্রকৃতি মানে বৃষ্টি বা আলোর স্বল্পতার সহায়তা। লাল-সবুজের ভক্ত-সমর্থকরা নিশ্চিত চাইবেন, বাজে আবহাওয়ার কারণে ম্যাচের বাকি অংশটা যেন না হয়।
লিটন দাস ১৪* রান নিয়ে উইকেটে টিকে আছেন। ৪* রান নিয়ে তার সঙ্গে ব্যাটিং লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩২ রানের ইনিংস খেলেন টাইগার ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। আর ৬৩ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪০ রান নিয়ে মেন্ডিসের বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিম। ২৬ রান সংগ্রহ করেন ওয়ান ডাউনে নামা টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। তার আগে ৪৬ বলে ৫ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৪ রান করে প্রবীণ জয়াবিক্রমের বলে সুরঙ্গা লাকমলের হাতে ক্যাচ দেন ওপেনার সাইফ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা তিন ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল। এবার চতুর্থ ইনিংসে এসে আর পারেননি অর্ধ-শতক ছুঁতে। ২৪ রানের মাথায় দেশ সেরা এ ওপেনার ফিরেন রমেশ মেন্ডিজের বলে নিরোশান ডিকভেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে।
অভিষেকেই আলো ছড়ানো প্রবীণ জয়াবিক্রম প্রথম ইনিংসে নেন বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড ৬ উইকেট। টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসেও বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। পেয়ে গেছেন আরও দুই উইকেটের দেখা। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার উইকেট এখন ৮টি।
টাইগারদের সামনে এখন কেবল হার এড়ানোর লড়াই। কারণ উইকেট এখন পুরোপুরি বোলিং বান্ধব হয়ে পড়েছে। এমন উইকেটে রান পাহাড়ে উঠে জয় ছিনিয়ে নিতে হলে শেষ দিনে দরকার অলৌকিক ও অবিশ্বাস্য কিছু পারফরম্যান্স। আর পুরনো রেকর্ড ভেঙে গড়তে হবে নতুন বিশ্ব রেকর্ড।
টেস্টে এত বিশাল আকাশ ছোঁয়া রান তাড়া করে এর আগে কেউ জিততে পারেনি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে। বিদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের ২৮২ রানের বেশি করার নজির নেই। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৪১৩ রান তুলেছিল ২০০৮-০৯ মৌসুমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর ২০০৩ সালে ৪১৮ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। জিততে হলে এ সব রেকর্ড এখন ভাঙতে হবে অতিথিদের।
তার আগে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। তাইজুলের বলে ১২ রান নিয়ে সুরঙ্গা লাকমল আউট হলে এক উইকেট হাতে রেখেই ব্যাটিং পর্ব চুকিয়ে ফেলে ক্যাপ্টেন দিমুথ করুনারত্নের দল। এতে স্বাগতিকদের লিড দাঁড়ায় ৪৩৬ রান।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং ভালো করেছেন টাইগাররা বোলাররা। ৭২ রান খরচায় তাইজুল ইসলাম একাই শিকার করেন পাঁচ উইকেট। এনিয়ে টেস্টে অষ্টমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি ছুঁলেন তিনি। দুই ইনিংস মিলে তার উইকেট এখন ছয়টি। ৬৬ রানে দুটি উইকেট গেছে মেহেদী হাসান মিরাজের থলেতে। এতে প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে রাখা গেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। কেননা প্রথম ইনিংসেই লঙ্কানরা এগিয়ে ছিল ২৪২ রানে।
দিমুথ করুনারত্নের পর উইকেট থেকে বিদায় নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৫২ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৪১ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়ে ফেরেন এ লঙ্কান অলরাউন্ডার।
৭৮ বলে ৭ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৬৬ রান নিয়ে আউট হন লঙ্কান ক্যাপ্টেন করুনারত্নে। সাইফ হাসানের বলে বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এ ওপেনার। ক্যারিয়ারের সেরা একটি টেস্ট সিরিজ খেললেন করুনারত্নে। দুই টেস্টের ৩ ইনিংস মিলিয়ে সংগ্রহ করলেন রেকর্ড ৪২৮ রান। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে এ ব্যাটার করে ছিলেন ৩৫৬ রান। পাথুম নিসানকার ২৪ রান ও নিরোশান ডিকভেলা ২৪ রান যোগ করেন দলীয় স্কোরে।
২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ১৩ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১ রান নিয়ে নতুন দিনের খেলা শুরু করেন। শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ৪৯৩ রান নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২৫১ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৯৩/৭ ডি., ১৫৯.২ ওভার (থিরিমান্নে ১৪০, করুনারত্নে ১১৮, ওশাদা ৮১, ডিকভেলা ৭৭*, রমেশ ৩৩ ও নিসানকা ৩০; তাসকিন ৪/১২৭, তাইজুল ৮৩/১, শরিফুল ১/৯১ ও মিরাজ ১/১১৮)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৫১/১০, ৮৩ ওভার (তামিম ৯২, মুমিনুল ৪৯, মুশফিক ৪০, সাইফ ২৫, মিরাজ ১৬; জয়াবিক্রম ৬/৯২, লাকমল ২/৩০ ও রমেশ ২/৮৬)।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৪/৯ ডি., ৪২.২ ওভার (করুনারত্নে ৬৬, ধনাঞ্জয়া ৪১, নিসানকা ২৪, ডিকভেলা ২৪; তাইজুল ৫/৭২ ও মিরাজ ২/৬৬, সাইফ ১/২২ ও তাসকিন ১/২৬)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭৭/৫, ৪৮ ওভার (মুশফিক ৪০,সাইফ ৩৪, মুমিনুল ৩২, শান্ত ২৬, তামিম ২৪, লিটন ১৪* ব্যাটিং, মিরাজ ৪* ব্যাটিং; রমেশ ৩/৮৬, জয়াবিক্রম ২/৫৮)।
#চতুর্থ দিন শেষে