আশঙ্কাটা চতুর্থ দিনেই জেগেছিল। খেলা যে পর্যায়ে আছে তাতে করে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্ট ড্র হতে বাধ্য। শেষ দিনে সকালের সেশনেও লঙ্কানরা ব্যাটিং করে গেলে ক্রিকেট প্রেমীরা ড্র’য়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনে বৃষ্টি বাগড়া দিয়ে বসলে পুরনো সেই শঙ্কাটাই সত্যি হয়ে যায়। ম্যাচ হয়ে যায় ড্র। বৃষ্টি এসে ম্যাচ ড্রয়ের আনুষ্ঠানিকতা একটু এগিয়ে দিয়েছে আরকি।
বিদেশের মাটিতে টানা ৯ টেস্ট পরাজয়ের দুর্ভাগ্যটা ঝেটিয়ে বিদায় করল মুমিনুল হক-তামিম ইকবালরা। অবশেষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হার এড়াল তারা। পেল ড্র’য়ের দেখা।
খেলা অমীমাংসিত থাকায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম পয়েন্ট পেল টাইগাররা। ষষ্ঠ ম্যাচে এসে আইসিসি'র টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকায় নবম স্থানে থাকা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের নামের পাশে যোগ হলো ২০ পয়েন্ট। শুধু বাংলাদেশই নয়। পয়েন্ট পেল তালিকার অষ্টম স্থানে থাকা স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাও। তাদের সংগ্রহে যোগ হয়েছে সমান ২০ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৪০ পয়েন্ট।
দুরন্ত ব্যাটিং ফর্মটা দ্বিতীয় ইনিংসেও বইয়ে নিয়ে যান তামিম ইকবাল। বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট চালিয়ে যান দেশ সেরা এ ওপেনার। সেই ব্যাটিং নৈপুণ্যে পেয়ে যান দাপুটে এক হাফ-সেঞ্চুরি। কিন্তু সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। এনিয়ে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই শতক মিস করলেন তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে জাদুকরী তিন অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন মাত্র দশ রানের জন্য। এবার বৃষ্টির কারণে খেলা ফের শুরু না হওয়ায় ৭৪* রানের হার না মানা ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলেন না।
৩৩ ওভার শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ১০০ রান সংগ্রহ করে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। অতিথিরা তখন মাত্র ৭ রানে পিছিয়ে। ৯৮ বলে ১০ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ৭৪* রান করে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন তামিম। ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক ২৩ রান দিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চা বিরতির পর খেলা শুরু হওয়ার আগেই পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হানা দিয়ে বসে বৃষ্টি। মাঠ ভেজায় থাকায় পঞ্চম ও শেষ দিনের শেষ সেশনের খেলা আর মাঠে গড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে দুদলই ড্র মেনে নেয়।
পঞ্চম দিনের শুরুতেই জোড়া আঘাত করেন তাসকিন আহমেদ। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার পর ডাবল সেঞ্চুরিয়ান করুনারত্নেকেও ফেরান এ টাইগার পেসার। তাসকিনের বলে নাজমুল হাসান শান্তর হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ওপেনার করুনারত্নে খেলেন ৪৩৭ বলে ২৬ বাউন্ডারিতে ২৪৪ রানের অনন্য এক ক্রিকেটীয় ইনিংস।
তার আগে চতুর্থ দিন বল হাতে বাজে একটি দিন গেছে বাংলাদেশের বোলারদের। একটি উইকেটও পাননি তারা। তবে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হতেই সাফল্য পান তাসকিন আহমেদ। তারকা পেসার ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯১ বলে ২২ বাউন্ডারিতে ১৬৬ রানের দাপুটে এক ইনিংস খেলেন এ লঙ্কান অলরাউন্ডার। চতুর্থ উইকেটে ৫৫৩ বলে ৩৪৫ রানে ভাঙে করুনারত্নে-ধনাঞ্জয়ার রেকর্ড পার্টনারশিপ। সব মিলিয়ে তাসকিন উইকেট পান ৩টি।
রোববার, ২৫ এপ্রিল সকালে ৩ উইকেটে ৫১২ রান নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। ২৩৪ রান নিয়ে মাঠে নেমে দলের ও ব্যক্তিগত স্কোরে ১০ রান যোগ করেন দিমুথ করুনারত্নে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা নতুন দিন শুরু করেন ১৫৪ রানের পুঁজি নিয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি এনে দেন ১২ রান। শ্রীলঙ্কার স্কোরে শেষ দিনে সব মিলিয়ে যোগ হয় ১৩৬ রান।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেই ৭ উইকেটে ৫৪১ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবাল (৯০) দশ রানের জন্য শতক মিস করলেও সেঞ্চুরি হাঁকান নাজমুল হোসেন শান্ত (১৬৩) ও ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক (১২৭)। মুশফিকুর রহিম (৬৮*) ও লিটন দাস (৫০) অর্ধ-শতকের দেখা পান তৃতীয় দিন এসে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৪১/৭ ডি., ১৭৩ ওভার (শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, তামিম ৯০, মুশফিক ৬৮* ও লিটন ৫০; বিশ্ব ফার্নান্ডো ৪/৯৬, ধনাঞ্জয়া ১/১৩০, লাকমল ১/৮১ ও লাহিরু ১/৮৮)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৬৪৮/৮ ডি., ১৭৯ ওভার (করুনারত্নে ২৪৪, ধনাঞ্জয়া ১৬৬, লাহিরু ৫৮, হাসারাঙা ৪৩, ডিকভেলা ৩১, ম্যাথুস ২৫; তাসকিন ৩/১১২, তাইজুল ২/১৬৩ ও মিরাজ ১/১৬১ ও এবাদত ১/৯৯)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১০০/২, ৩৩ ওভার (তামিম ৭৪*, মুমিনুল ২৩*, সাইফ ১, শান্ত ০; লাকমল ২/২১)।
ফল: ম্যাচ ড্র।
সিরিজ: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ০-০ তে সমতা।
ম্যাচ সেরা: দিমুথ করুনারত্নে।