আমার মণির ‘মরা মুখটাই’ দেখতে চাই!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিযার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 22:50:53

কদম তলীর ডিএনডি খাল, বহুবছর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা এই খালকে ‘মরণফাঁদ’ বলে আসছেন। এমনকি এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায়ও লেখা হয়েছে বহুবার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার উদ্যোগ নিলেও অজানা কারণে খালটি পরিত্যক্ত রয়ে গেছে। এই খালে গত শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) ৫ বছরের শিশু ‘আশামণি’ নিখোঁজ হয়। কর্তৃপক্ষের ‘উদাসীনতায়’ সন্তানহারা হয়েছেন মা তানিয়া খাতুন।

৫ দিন ধরে খালের ধারে দাঁড়িয়ে শোকাতুর এই মা মেয়ের অপেক্ষায় চোখের জল শুকিয়ে ফেলেছেন। আর্তনাদ করার ভাষাও তার হারিয়ে গেছে। নির্বাক হয়ে প্রহর গুণছেন মেয়ের মরদেহ দেখার।

বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে কদমতলীতে উদ্ধার কাজ দেখতে গিয়ে আশামণির মা তানিয়া খাতুনকে ডিএনডি খালের ধারে পাওয়া যায়।

এই মনে হয় ভেসে উঠছে ‘বুকের ধন’ এমন আশায় চেয়ে থাকা সন্তানহারা এ জননী বলেন, ‘আমি খেতে বসলেও যে তোকে কোলে নিয়ে খেতে বসতাম! সামান্য চোখের আড়াল হতে দিতাম না। আজ তুই কিভাবে আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালালিরে মা। আমি জানি আমার সোনা তুই বেঁচে নেই। ৫ দিন হলো আমি এমন-মা, তোর মরা মুখটা দেখতে পাচ্ছি না।'

রাজধানীর কদমতলীর ডিএনডি খালে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আশামণি
রাজধানীর কদমতলীর এই ডিএনডি খালেই নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আশামণি

মেয়ের মরা মুখ একবার দেখার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ জীবনে আমি আর কিছু চাইনা। শুধু আমার সোনা মণির মরা মুখটাই একবার দেখতে চাই’।

শনিবার রাজধানীর কদমতলীর ডিএনডি খালে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আশামণি। এরপর স্থানীয়রা, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর একটি দল শিশুটির সন্ধানে ৫ দিন ধরে সন্ধান চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিশুটির কোনো সন্ধান দিতে পারেনি উদ্ধার কর্মীরা।

দুই সন্তানের জননী তানিয়া খাতুন বলেন, আমি যদি জানতাম ওখানে তোহা (আশামণি) ডুবে যাবে। আমি ওকে বুক চিরে কলিজার তেতর রেখে দিতাম। এমন অভাগা মা আমি, সন্তান মরে গেছে ওই সন্তানের মুখটা ৫ দিন ধরে দেখতে পারিনাই।

সন্তান নিখোঁজের কষ্ট আর ‘সহ্য’ করতে পারছেন না এই মা। চোখে অশ্রুশূন্য মা তানিয়া বলেন, যেদিন বিকেলে ডুবে গেল, ওইদিন আমাকে বলেছিল মা পিঠে খাব। পিঠে আর খাওয়া হলো না আমার। আমি তো সহ্য করতে পারছি না। খালে ডুবে গেছে এটা শোনার ২ মিনিটের মধ্যে আমি ঝাঁপ দিয়ে পড়ি। আমি অনেক চেষ্টা করছি সোনা মুখটা খুঁজে পাইনি।

উদ্ধার অভিযান চলছে
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও নেমেছে উদ্ধার অভিযানে

এদিকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড় এখানে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার পরিষ্কার করা হলেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি আশা মণিকে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আস্তে আস্তে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলতে থাকবে।

এদিকে নিখোঁজ আশামনির বাবা এরশাদ অভিযোগ করে বলেন, নিখোঁজের প্রথম দুই দিন সিটি করপোরেশন নাকি ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ চলাবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়। সে সময়েই আমার মেয়েটা নিখোঁজ হয়ে যায়। আমরা কিছু চাইনা শুধু মেয়েটাকে ফিরে চাই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর