ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন শিক্ষকের

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪, লক্ষ্মীপুর | 2025-01-19 20:45:40

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বিগত ফ্যাসিবাদ শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় মাদরাসা শিক্ষক মো. শাহজামালকে জোরপূর্বক চাকরি থেকে বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে গত ১৩ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। চাকরিতে পুনরায় যোগদানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও অনুমতি মিলছে না।

ভূক্তভোগী শাহজামাল রামগঞ্জ খাতুনে জান্নাত মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। ২০১১ সালে তাকে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিক্ষক আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক তাকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শাহজামাল জানান, ১৯৯৭ সালে ক্বারী পদে শাহজামাল খাতুনে জান্নাত দাখিল মাদ্রাসায় যোগ দেন। ২০১১ সালে তখনকার মাদ্রাসা সুপার মুরাদ হাছানের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এতে মুরাদ তাকে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিক্ষক আখ্যা দিয়ে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। একই বছর লোকজন দিয়ে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে সাদাকাগজে সাক্ষর নেয় মাদ্রাসা সুপার। এরপর থেকে তিনি আর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে পারেননি। জীবন রক্ষায় তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন।

অভিযোগ করে শাহজামাল বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে এমপিও তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেয়। এখনো আমার পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চাকরিটি না থাকায় স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছি। চাকরিতে পুনরায় যোগদানের অনুমতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি, কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান মেহেদী ও মো. সেলেমান জানায়, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রুহুল আমিন ছিলেন। তখন মাদ্রাসা সুপার মুরাদও আওয়ামী সমর্থিত ছিলেন। এজন্য শাহজামালকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। একপর্যায়ে কৌশলে তাকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করেছেন। ১৯৯৭ সালে যোগদানের পর দীর্ঘ ৭ বছর শাহজামাল বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। তখন মানুষের দানের টাকা মাদ্রাসা চলতো। চাকরি হারিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চাকরিটি ফিরে পেলে তিনি স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।

মাদ্রাসারা নৈশপ্রহরী সামছুল হক বলেন, এমপিওভুক্ত হওয়ার আগে শাহজামাল হুজুর বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি আর মাদ্রাসায় আসেন না, পাঠদানও করান না। তবে কারণটি বলতে পারছি না।

মাদ্রাসার বর্তমান সুপার আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি ১৩ বছর আগের। এনিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সাবেক সুপার মুরাদ হাছান বলেন, ঘটনার দিন আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছিলাম। মাদ্রাসা থেকে আমাকে মোবাইলফোনে জানানো হয় এক ছাত্রীর সঙ্গে শাহজামাল অসদাচরণ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তিনি চাকরি হারিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মামুন বলেন, ঘটনাটি অনেক পুরনো। পুরোপুরি জানা নেই। শাহজামালকে আসতে বলেছি, বিষয়টি উনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর