সৃষ্টি যার আইন ও হবে তার: চরমোনাই পীর

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2025-01-19 19:35:23

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সর্বক্ষেত্রে যদি সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) অগ্রাধিকার থাকে তবে তার নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী বিচার বিভাগসহ সবকিছু চলবে এটাই বাস্তবতা। সৃষ্টি যার আইন ও হবে তার।

চরমোনাই পীর বলেন, ব্রিটিশসহ অন্যান্য মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করার কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি, অসুন্দর, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য করার বহু প্রবনতা আছে। মুসলমান সর্বক্ষেত্রে মানব রচিত আইনের পরিবর্তে কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করবে। তারপরও অনেক মুসলমান আইন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে ইসলামকে গুরুত্ব দিতে চায় না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, মুসলমান দাবি করলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মানতেই হবে। ইসলামী নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

অনেকে ইসলামের আইনের কথা শুনলে ভয় পায় মন্তব্য করে চরমোনাই পীর বলেন, অথচ সম্পত্তি বন্টনে ইসলামের বিধান অনুসরণ করা হয়। এখানে কোন বৈষম্য আছে বলে কখনো কেউ বলতে পারেনি। তিনি বলেন, কেউ না বুঝে ইসলামী আইনের মধ্যে কঠোরতা রয়েছে বলে প্রচার করে। এজন্য প্রকৃত অর্থে ইসলামকে আগে বুঝতে হবে। ইসলামে চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া হয় এটা সঠিক। কিন্তু ইসলাম সব চোরের হাত কাটার নির্দেশ দিয়েছে কিনা এটা জানা থাকা দরকার। তিনি বলেন, চোর দুই প্রকার, একটি অভাবী, আর একটি স্বভাবী। মন্ত্রী-এমপি যারা রাষ্ট্রীয় অর্থ,সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করে এরা অভাবী চোর নয়, স্বভাবী চোর। অভাবী চোরের হাত কাটা নির্দেশ ইসলামে নেই । ইসলাম স্বভাবী চোরদের হাত কেটে দিতে বলেছে । বাংলাদেশের একজন স্বভাবী চোরের হাত কেটে দেওয়া হলে এদেশে চুরি থাকবে না। তাই বাংলাদেশে চুরি বন্ধে হাত কাটার আইন থাকতে হবে।

চরমোনাই পীর বলেন, ফ্যাসিস্ট তাড়িয়েছি, আবার নতুনভাবে যাতে ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয় সেদিকে সকলকে নজর রাখতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছেলে, বাবা বা আত্মীয় চেনে না, যে যখন অপরাধ করবে ইসলামী আন্দোলন তার বিরুদ্ধে তখন রাজপথে ঝাপিয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ৫৩ বছরে দেশ একবার, দুইবার নয় পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে অতীতের শাসকরা। এই দুর্নীতিবাজদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার থেকে দূরে রেখে পরিবর্তন আনতে হবে। সৎ, যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ মানুষকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।

চরমোনাই পীর বলেন, দেশে শান্তি চাইলে সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করা জরুরী। মুসলমান হয়ে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি তাই সকলকে মানতে হবে, "সৃষ্টি যার আইন হবে তার"। আইনজীবীদেরকে ন্যায়ের পক্ষে আইনি লড়াই করতে হবে । শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ অনেকেই ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করেছেন।

তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর আগামী ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আতিয়ার রহমানকে সভাপতি, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল বাসেতকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমানকে সহ-সভাপতি,  এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বায়জিদ হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে আজ ১৯ জানুয়ারী, রবিবার, বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখ এর সভাপতিত্বে ও এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়ার পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আপীল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্টা এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, ময়মনসিংহ জেলা বারের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ, কুমিল্লা বারের আইনজীবী এ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ, সুপ্রিম কোর্ট বার শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত। বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ফ্যাসিস্ট আল্লাহকে বিশ্বাস করতো না। তারা বলতো মানুষের ভাগ্য ফেরাবে। অথচ তারা মানুষের ভাগ্য ফেরানোর সেই সুযোগ পায়নি। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট যুগে যুগে আসে আবার চলে যায়। ৫ আগষ্টের বিপ্লবের রচনা একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সংগ্রাম সাধনা এবং ঝড়, ঝাপটা, গুলি, গুম, খুন দীর্ঘ দিন চলে আসার বাস্প বিষ্ফোরণ হয়েছে ৫ আগষ্ট।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, মানব রচিত আইন ও ইসলামী আইনের পার্থক্য তুলে ধরতে চাই। মানব রচিত আইনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ নেই। এই মানব রচিত আইন স্বৈরাচার,‌ফ্যাসিষ্ট তৈরি করে, নিরীহ মানুষ হত্যা করে। তিনি বলেন, বিগত ৫৩ বছরে মানব রচিত আইনের কারণে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি । আশরাফ আলী আকন বলেন, সামান্য কিছু সুবিধার জন্য অনেক আইনজীবী স্বৈরাচারের পক্ষাবলম্বন করে। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না হলে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। বিচারের ক্ষেত্রে অমানবিকতা ও বৈষম্য থাকা আমার দেশ, আইন ও সংবিধানের জন্য কলঙ্ক।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালত। এই আদালতকে দলীয় ও ব্যাক্তি স্বার্থে ব্যাবহার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রধান বিচারপতি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে অতীতে বিচারবিভাগকে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনজীবীরা সঠিক দায়িত্ব পালন করলে মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। ইসলাম সকল যুগের জন্য যে সময়োপযোগী আইন দিতে প্রস্তুত এটা সকলকে জানাতে হবে। মানুষের মুক্তির জন্য আল্লাহর বিধানকে নিয়ে চিন্তা করুন। বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছে স্বাধীন করা হয়নি। এজন্য একজন বিচারককে জেলা প্রশাসকের অধীনে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককে আলাদা করে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলে সংস্কার করবে না। সংস্কারের পরে নির্বাচন দেয়া হলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার বলেন, সরকারী আইনজীবী নিয়োগের একটি নীতিমালা থাকা দরকার। নীতিমালা না থাকায় যোগ্যরা বাদ পরে চাটুকররা এগিয়ে যাচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর