গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ঢাকার আশুলিয়ায় শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পিঠা উৎসব। উৎসবে শিশুরা নানা ধরণের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছে, যেখানে ক্রেতাদের অধিকাংশই শিশু।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকায় দূর্গাপুর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের আয়োজনে এ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
কালের পরিক্রমায় পিঠাতেও এসেছে পরিবর্তন। তাই হারিয়ে যাওয়া পিঠার সাথে স্থান পেয়েছে বাহারি রঙ ও স্বাদের কেক এমনকি মোমোও। পিঠার একেক স্টল থেকে ভেসে আসছিল একেক পিঠার সুঘ্রাণ। পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, কিছু পিঠা একেবারেই নতুন আবার কিছু খুব পরিচিত। প্রতিটা পিঠার ওপরে লেখা আছে নাম ও মূল্য। এসব পিঠার নামও বেশ সুন্দর। শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরে দেখছেন স্টল। জানছেন নতুন নতুন পিঠা সম্পর্কে। এ সময় পুরো স্কুল মাঠ রূপ নেয় অন্যরকম মিলনমেলায়।
পিঠা উৎসবে ১৫ টি পৃথক স্টলে ছিল শতাধিক বাহারি রকম পিঠা। যেমন ভাপা, দুধপুলি, পুলি, পাটিসাপটা, জামাই সোহাগী, গোলাপ, চিতই, পায়েস, পুডিং, তেল পিঠা, দুধ চিতই, ফুল পিঠা, নকশি পিঠা, খেজুর কাটা পিঠাসহ শতাধিক পিঠাপুলি। এছাড়া চকলেট কিংবা ভ্যানিলা কেক এর সাথে জায়গা পেয়েছে মোমো, আচার, ফুচকা-চটপটি সহ নানা পদ।
বাসায় অভিভাবকরা পরম যত্নে তৈরী করে দিয়েছেন পিঠাগুলো। যারা একটু বড় তারা নিজেরাও বানিয়েছে পিঠা। সেগুলোই জায়গা পেয়েছে উৎসবে। পিঠা বিক্রিতে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মত।
মেলায় একটি স্টলে শিশুদের জন্য ছিল হাতে মেহেদী রাঙানোর সুযোগ। হাতে মেহেদীর নানা সাজের সাথে শিশু-কিশোরদের মুখে ফুটে উঠছিল একরাশ আনন্দ।
জানা-অজানা পিঠার সম্পর্কে জানতে পেরে এবং স্বাদ গ্রহণ করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের শীতের এই পিঠার এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে খুশি অভিভাবক ও স্থানীয়রা। তাদের চাওয়া প্রতি বছরই যেন এমন আয়োজন করা হয়।
ইউটিউব দেখে পিঠা বানিয়েছে দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান। হাসিবুল বলে, ছোট বেলা থেকে মা-চাচীদের দেখেছি নানা পিঠা বানাতে। তাই কিছুটা আইডিয়া ছিল, বাকিটা ইউটিউব দেখে বানিয়েছি। আমরা ৫ বন্ধু নিজেরাই সব করেছি। বাসার কারও সাহায্য নেইনি।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে পিঠা উৎসবে স্থানীয়দেরও ব্যাপক ভিড় ছিল। তারাও আনন্দ সহকারে পিঠার স্টলগুলো ঘুরে দেখেছেন, পিঠা স্বাদ নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মন্ডল বলেন, এত এত পিঠা যে আছে তা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ এত পিঠা দেখে মনে হল ছোট বেলায় ফিরে গিয়েছি। খুব ভালো লেগেছে। এমন আয়োজন প্রতি বছর হওয়া প্রয়োজন।
দূর্গাপুর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. রুবেল মন্ডল বলেন, আমরা ছোট বেলায় যেসমস্ত পিঠা দেখেছি ও খেয়েছি এই প্রজন্ম তার অর্ধেকও হয়ত দেখার সুযোগ পায়নি। দিন দিন আধুনিকতার কারণে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে তাই বছরে দুই একটা পিঠা ছাড়া আমাদেরও অন্যান্য পিঠা খাওয়া হয়না। বাচ্চাদেরও তো একই অবস্থা। বছরে একটা দিন যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সাথে বাচ্চাদের পরিচিত করতে পারি তাই এই আয়োজন।