‘রক্ত নিলে রক্ত নিন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিন’

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-10-21 16:11:36

ছয় দাবিতে চট্টগ্রামে মাঠে নেমেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এসময় মানববন্ধনে নানা স্লোগান লেখা ব্যানার-ফ্যাস্টুন প্রদর্শন করেন তারা। কারও হাতে ছিল ‘রক্ত নিলে রক্ত নিন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিন’, ‘টেকনেশিয়ান হটাও, টেকনোলজিস্ট বাঁচাও’, ‘শিক্ষা মোদের দাবি নয়, শিক্ষা মোদের অধিকার।’

সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে প্রেসক্লাবের সামনে ‘মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা বলেন, সম্প্রতিকালে সংগঠিত হওয়া 'জুলাই বিপ্লব' নামে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুথান, সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এদেশের গণমানুষের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আশার সঞ্চার করেছে। জনগণ তাদের অন্যসব অধিকারের পাশাপাশি সর্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। স্বাস্থ্যসেবাকে গণমুখী করতে হলে স্বাস্থ্য সেবার নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সব জনবলের অধিকার সুনিশ্চিত করা অত্যবশকীয়। চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের পেশাগত সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই একটি অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা একটি টিম ওয়ার্ক যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পেশাজীবী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের জন্য কোনো স্বতন্ত্র পরিদফতর বা উইং নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেবা পরিদফতর বাংলাদেশের নার্সিং ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠন করা হয় ১৯৭৭ সালে। কাজের পরিধি বৃদ্ধি ও জনবলের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে ১৬ নভেম্বর ২০১৬ সালে সেবা পরিদফতরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর হিসেবে উন্নীত করা হয়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা উভয় বিভাগের অধীনস্থ মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষা এবং, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশাজীবীদের পেশাগত লক্ষ্য বাস্তবায়ন, বদলি, পদোন্নতি, উচ্চ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সক্ষতা বৃদ্ধি, সমন্বয়ের জন্য কোনো স্বতন্ত্র উইং, পরিদফতর কিংবা অধিদফতর নেই।

দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ আছে দাবি করে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ারা আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাইডলাইন অনুযায়ী ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স ও৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও অধিক সময় প্রশাসনিক জটিলতায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারি চাকরিতে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা মাত্র ৪১০৬ এবং মোট পদের সংখ্যা ৫৯৭৫ টি। চিকিৎসক ও নার্সের বিদ্যমান সংখ্যার অনুপাতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হওয়ার কথা ছিল ৮০ হাজারেরও বেশি। নিয়োগ জটিলতা কেটে গেলেও ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি এখনও নানাবিধ খোঁড়া অজুহাতে আটকে রাখা হয়েছে।

তারা ছয়টি দাবি জানান। সেই দাবিগুলো হলো, ‘ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণির গেজেটেড) পদমর্যাদা প্রদান করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নীতিমালা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে পদ সৃজন এক দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের স্থগিতকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নবম গ্রেডের পদসৃষ্টি পূর্বক চাকরীজীবিদের আনুপাতিক হারে পদোন্নতির নিয়ম বহাল রেখে স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ ও নিয়োগবিধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, ঢাকা আইএইচটি-কে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে এবং ভক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল আইএইচটিসমূহের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার প্ল্যান গঠন করে বিদ্যমান নিয়োগ বিধি ও অসংগতিপূর্ণ গ্রেড সংশোধন করতে হবে। মেডিকেল টেকনোলজি কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে পেশাদার লাইসেন্স প্রদান, ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠন এবং প্রাইভেট সার্ভিস প্রতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বি ফার্মসহ সকল অনুষদের বিএসসি ওএমএসসি কোর্স চালু করা এবং স্কলারশিপসহ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু করতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবীদের আত্মমর্যাদা, সামাজিক অবস্থান সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবায় তাদের গুরুত্ব বিবেচনা দরে মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি পেশাকে বৈষম্য ও বঞ্চনার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার জন্য বিনীত আহবান জানাচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর