ডাকাতির ভয়ে ভৈরবে নৌ চলাচল বন্ধ, আশ্বাসের পর চালু

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2024-10-14 15:39:30

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ঘাটে নৌযান নোঙর করে ধর্মঘট করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের অরুয়াইলগামী মাল বোঝাই ট্রলারের মাঝিরা। যাত্রাপথে ডাকাতির ভয়ে ভৈরব থেকে কোনো মালামাল লোড ও যাত্রীরা বহন করছে না ২০টি ট্রলার। তবে সোমবার (১৪ অক্টোবর) থেকে প্রশাসন থেকে আশ্বাসের পর নৌ-চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন নৌকা মালিকরা।

এর আগে গতকাল রোববার ভৈরব বাজার নদীরপাড় এলাকা থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি কোনো নৌযান। এতে করে বিপাকে পড়েছে ভৈরব বাজারের ব্যবসায়ীরা ও নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা।

জানা যায়, নদী বন্দর ভৈরব থেকে থেকে অরুয়াইল ২২ কিলোমিটার নৌপথ। এই পথে ৫-৭টি নৌ ঘাটে মাল লোড আনলোড করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভৈরব, আশুগঞ্জ, আজিমপুর, বড়ইচড়া, পরমানন্দপুর, বৈশ্বর ও অরুয়াইল নৌঘাট। এসব ঘাটে ট্রলার চলাচল করার সময় আশুগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে পানিশ্বর এলাকার মা-মনী ইটখলা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে ডাকাতি সংগঠিত হয়। সরাইলের পানিশ্বর এলাকা হচ্ছে মেঘনা ও কুশিয়ারা নদীর মিলনস্থল। এ পানিশ্বর এলাকার নদী ঘোনা এলাকা হওয়ায় ত্রিমুখী নদী পথ থাকায় ডাকাতরা ডাকাতি করে সহজে পালিয়ে যেতে পারে।

এদিকে দুই থানার সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা। ভৈরব থানা বলছে, এটি আশুগঞ্জ থানার এরিয়াভূক্ত, আর আশুগঞ্জ থানা বলছে এটি ভৈরব থানার এরিয়াভূক্ত।

আজিমপুরের কামাল মাঝি, বড়ইচড়ার ফরিদ মাঝি, পর্মানন্দপুরের জাহের মাঝি ও বৈশ্বরের আনফর মাঝি বলেন, আমরা একা নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারছি না। গত ৩ মাসে ৫টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে মাঝি আজিজুল বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম মাঝিকে মারধর করে ডাকাতদল। এসময় তাকে কুপিয়ে আহত করে সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আমিও কয়েকবার ডাকাতির শিকার হয়েছি। প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে চলাচাল করতে হয় নদী পথ দিয়ে। এ বিষয়ে ভৈরব ও আশুগঞ্জ পুলিশকে অবগত করলে এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ জন্য আমরা ধর্মঘট করেছি।

মাঝি মহি উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ থেকে অরুয়াইল যাওয়ার পথে ডাকাতির শিকার হয়েছি। এসময় আমার ট্রলারে থাকা নারী যাত্রীদের স্বর্ণালংকার ও পুরুষ যাত্রীদের টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদের অনুরোধ করার পরেও এক নারী যাত্রীর কান ছিড়ে রক্তাক্ত করে স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আমরা আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট পার হওয়ার পরই ডাকাতির শিকার হয়। এছাড়াও ১১ ও ১২ অক্টোবর ডাকাতদের ধাওয়া খেয়ে আমরা কোনো রকম বেঁচে যাই।

ভৈরব ও অরুয়াইল নৌযান চলাচল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল বলেন, ১২ অক্টোবর নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশে রওনা দেয়ার পর পানিশ্বর এলাকায় ডাকাতের হামলার শিকার হয়েছি। পরে আমরা তিন চারটি নৌকা এক সাথে হয়ে অরুয়াইলের উদ্দেশে রওনা দেই। যদিও আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি তবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। ইতিমধ্যে গত ২/৩ মাসে ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে। এই কয়েকদিনে প্রায় শতাধিক মোবাইলও লুট হয়েছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আমি বিভিন্ন কাঁচামাল অরুয়াইলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু অরুয়াইলগামী মাঝিরা ধর্মঘট করেছে। ডাকাতির ভয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছে। আমি ৫০০ টাকা খরচের মালামাল ১৫শ টাকা খরচ করে অরুয়াইল পাঠিয়েছি।

মসলা ব্যবসায়ী কবীর ও ভূসি ব্যবসায়ী আব্দুল বাসেদ বলেন, নদী বন্দর ভৈরব থেকে নৌ পথে ৭৫% মালামাল সরবরাহ করা হয়। ভৈরব থেকে অরুয়াইলের পথে বেশির ভাগ মালামাল পাঠানো হয়। কিন্ত ডাকাত আতঙ্কের কারণে বন্ধ রয়েছে অরুয়াইলের পথে নৌ চলাচল। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছি। প্রতিদিন ভৈরব ঘাট দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।

অরুয়াইলের যাত্রী আকবর আলী মেম্বার বলেন, আমাদের বাড়িতে যেতে সহজ পথ নৌ পথ। সড়ক পথে র্দীঘ সময় লাগে ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। এদিকে ডাকাত আতঙ্কে নৌ পথে চলাচল করতে পারছি না। সরকার ও প্রশাসনের নজরদারি কামনা করছি।

এ বিষয়ে নৌ-ঘাটের ইজারাদার খোকা মিয়া বলেন, নৌকার মাঝিরা আমার কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছে। ডাকাতি প্রসঙ্গে আমি আশুগঞ্জ ও ভৈরব নৌ-পুলিশকে অবগত করেছি। ডাকাতির জন্য ভৈরব থেকে অরুয়াইলের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে আমরা ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন বলেন, মাঝিদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের নৌ-পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। মাঝিদের নৌকা নিয়ে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান করতে পারবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর