ফেনীতে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত ৯০ ভাগ জেলে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2024-10-14 15:30:34

নিরাপদ প্রজনন ও মা ইলিশ রক্ষার লক্ষ্যে রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য নদী ও সাগরের মোহনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ বছরের ইলিশের মৌসুম শেষ হয়েছে। অন্য মাছ ধরার অজুহাতে ইলিশ যাতে না ধরতে পারে সেজন্য জেলেদের নদী বা সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, এসময় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা সব জেলের জন্য প্রযোজ্য হলেও নিষেধাজ্ঞার সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি চাল পাবেন শুধুমাত্র ইলিশ জেলেরা। অর্থাৎ, যেসব জেলে ইলিশ জাল ব্যবহার করেন তারা ছাড়া অন্যরা সরকারি সহায়তা পাবেন না। এ সময় জেলার ৯০ ভাগ জেলের কাজ না থাকলেও সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকেন।

উপজেলার মৎস্য অফিসের সূত্র জানা যায়, উপজেলার চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের নিবন্ধিত দুই হাজারের অধিক জেলে পরিবার রয়েছে। তাদের মধ্যে উপকূলীয় জেলের সংখ্যা এক হাজার। তন্মধ্যে কার্ডধারী ইলিশ জেলে রয়েছেন ২৫০ জন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সোনাগাজী সদর ও চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জলদাস পাড়ার জেলে পল্লী সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইতোমধ্যে নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জামাদি নিয়ে উপকূলে ফিরেছেন জেলেরা। জেলেদের নৌকা নদীর তীরে সারিতে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে।

জেলেরা জানান, বছরে তিনবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রতিবারই বিকল্প কোনো না কোনো কাজ খুঁজে নিতে হয়। একদিকে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে কষ্টে দিন পার করতে হয়। সংসারের ব্যয়ভার বহনের জন্য মহাজনের কাছ থেকে এবং এনজিওর থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলে পরিবারগুলো।

অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ জেলেদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিলেও সব জেলে এ চাল পান না। যেসব ইলিশ জেলে সহায়তা পান তারাও দুই সপ্তাহের বেশি এ চাল দিয়ে সংসার চালাতে পারেন না। ফলে অভিযানের সময় ঋণের বোঝা আরও ভারী হয় জেলেদের। তাদের দাবি এই পেশায় যারা আছে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হোক।

জেলে পাড়ার সুমন জলদাস বলেন, নদী ও সাগরের মোহনা থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলতো। কিন্তু ইলিশ প্রজননের সময় মাছ ধরায় সব জেলের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই আয়ের পথ ২২ দিন বন্ধ থাকবে। নিবন্ধিত জেলে হয়েও কোনো ধরনের সহায়তা পান না তিনি। কারণ, শুধুমাত্র ইলিশ জেলের তালিকাভুক্তরাই পাবে এই নিষেধাজ্ঞার সময়ের প্রণোদনা।

দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার জেলে আবদুল মতিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে শুধু ২৫ কেজি চাল দিয়ে সংসার চলে না। সংসারে শাক-সবজি, মাছ এবং অন্যান্য বাজারও লাগবে। তাই নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিকল্প পেশা হিসেবে দিনমজুরের কাজ করব বলে ঠিক করেছি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল বাসার বলেন, ইতোমধ্যে সোনাগাজীর উপকূলীয় জেলেদের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার এবং অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

খাদ্য সহায়তা সব জেলে পায় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার জন্য শুধু নিবন্ধিত জেলে হলে হবে না, তালিকাভুক্ত ইলিশ জেলে হওয়া লাগবে। এ বিষয়টি আমাদের হাতে নেই, মৎস্য অধিদফতর যেভাবে দিতে বলে আমরা সেভাবে দিয়ে থাকি।

তিনি জানান, ইলিশ প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতিবছর এই সময়ে মাছ ধরা, পরিবহন, বিপণন ও সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে। অন্য মাছ ধরার অজুহাতে ইলিশ আহরণ ঠেকাতে এই সময়ে জেলেরা নদী বা সমুদ্রে যেতে পারবেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর