কৃষির উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানই বড় চাওয়া মাগুরাবাসীর

, জাতীয়

রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2024-01-01 14:06:13

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার কৃষি নির্ভর জেলা মাগুরা। প্রতিবছর প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে চাষাবাদ হয় এই জেলায়। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চল বেশি হওয়া কৃষিকে ঘিরেই গড়ে উঠা এখানকার অর্থনীতি।

এ জেলার শ্রীপুর ও মাগুরা সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসন। এছাড়া শ্রীপুর আংশিক, মোহাম্মদ পুর ও শালিখা উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসন।

মাগুরার এই দুই আসনে দীর্ঘ সময় ছিল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। বর্তমান সংসদ সদস্যরাও হচ্ছেন আওয়ামী লীগের। তবে রাস্তা ঘাট ও অবকাঠামোর বেশ কিছু উন্নয়ন মাগুরা ১ আসনে হলেও গ্রামীণ উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে আছে মাগুরা দুই আসন। দীর্ঘদিন রাস্তা ঘাট মেরামত না হওয়া মাগুরার দুই আসনেই বেশ কিছু রাস্তা বেহাল দশায় রূপ নিয়েছে। গ্রামীণ কাঁচা সড়ক গুলোরও নাজুক অবস্থা।


এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের চাওয়া কৃষি উন্নয়ন ও কলকারখানা স্থাপনের দিকে নজর দেয়নি কোন সংসদ সদস্যই। ফলে স্বাধীনতার অর্ধশত বছরেও কৃষি ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে মাগুরা জেলা।

স্থানীয়রা বলছেন, জেলার কৃষি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিই তাদের প্রধান দাবি। তবে ১৯৮৬ থেকে এখন পর্যন্ত সকল সংসদ প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি কেউ। জেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নেই লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বেশ কিছু পাকা সড়কেরও বেহাল দশা।

তাদের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের ফলে অল্প সময়েই ভেঙে গেছে নতুন সড়কগুলো। এছাড়া পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না থাকায় পানির অভাবে দুর্বিষহ কষ্টে কৃষকদের করতে হয় চাষাবাদ। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র না থাকায় পণ্য উৎপাদনে আধুনিক পদ্ধতি বা তার ব্যবহারের তথ্যও পৌঁছায় না প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে।


ধান,পাট ও পেঁয়াজ উৎপাদনের শীর্ষে থাকা এ জেলার উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোন অবকাঠামো না থাকায় প্রতিবছর বড় ক্ষতির মুখে পড়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা। পর্যাপ্ত  সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এ জেলায় স্বাধীনতার এত বছরেও গড়ে উঠেনি কোন কল-কারখানা।  এতে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার আছেন জেলার লক্ষাধিক যুবক।

মাগুরাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন আধুনিক কৃষি উন্নয়ন, সাথে দ্রুত কল-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এ জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিই এক মাত্র পথ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার। তাই সরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি ও কৃষি উন্নয়নে অবকাঠামো ও প্রান্তিক পর্যায়ে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি মাগুরাবাসীর।

মাগুরা সদর উপজেলার মঘী ইউনিয়নের কৃষক আবু বক্কর। প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। তবে সেচ সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ জমিতেও ধান আবাদ করতে পারেন না তিনি।


আবু বক্কর বলেন, আমাদের এলাকায় সেচের সমস্যা। দীর্ঘ দিন আমরা দাবি জানিয়ে এসেছি তবে আমাদের কৃষকের কথা কেউ শুনে না। পল্লী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় যদি সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করা যেত। আমরা অনেকটাই এগিয়ে যেতাম।

শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের কৃষক সোলেমান বলেন, টিভিতে দেখি সব জেলায় আধুনিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়। কিন্তু আমাদের জেলায় নেই। এছাড়া পণ্য বিক্রি ও মজুদ করতে আমাদের অনেক সমস্যা। এদিকে সরকারের কোন নজর নেই। আমাদের দাবি যদি কৃষি গবেষণাগার ও পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোন অবকাঠামো গড়ে উঠে এতে কৃষি নির্ভর এ জেলা আরও এগিয়ে যাবে।

একই ইউনিয়নের মাস্টার্স পড়ুয়া বিপ্লব কুমার, পড়াশুনার এ বছরেই শেষ হবে পড়াশুনা। তবে জেলায় তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় চিন্তা করছেন যাবেন প্রবাসে।

বিপ্লব বলেন, আমাদের এখানে সরকারি ভাবে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ আমরা অনেকেই পাই না। এছাড়া সরকারি ভাবে কোন ট্রেনিং সেন্টার না থাকায় উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠার দিকে থেকেও আমরা পিছিয়ে। আমাদের দাবী নিজ জেলায় যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। কলকারখানা গড়ে উঠে। সাথে যুবক দের স্বাবলম্বী করতে জেলায় টিটিসি ও সরকারি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলার দাবি।

আশরাফুল নামের আরেক যুবক বলেন, গরিব জেলা হিসেবে আমরা ৬ নম্বর। সকল সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমরা আধুনিক বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জেলার তালিকায়। যদি কর্মসংস্থান থাকত। কলকারখানা গড়ে তোলার দিকে সংসদ সদস্যরা নজর দিত আজ এ জেলা হতো সমৃদ্ধশালী একটি জেলা। আমরা চাই সংসদ সদস্যরা জেলায় কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করবে।

মাগুরা ২ আসনের আওতাধীন চাউলিয়া ইউনিয়নের কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় বর্ষাকালে হাঁটা যায় না। শীত কাল শুষ্ক মৌসুমের ফলে চলাচল করা যাচ্ছে না। রাস্তা ঘাটের দিকে নজর নেই কারও। এমপিরা আসে। কথা দেয় ভোট নেয় কিন্তু কাজ কেউ করে না। আশ্বাসেই বেধে রাখে আমাদের। আমরা উন্নয়ন চাই।

স্থানীয়দের চাওয়া ও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলা চেষ্টা করি বর্তমান সংসদ সদস্যদের সাথে।

নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের সাথে।

তবে মাগুরা ১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর জানান, আমি সংসদ সদস্য হয়ে জেলায় আইটি পার্ক স্থাপন করেছি। মেডিকেল কলেজ, ফোর লেন রাস্তা সহ নানাবিধ উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা ঘাট, আর্থসামাজিক উন্নয়ন করেছি। এবার মনোনয়ন পেলে অসমাপ্ত কাজ গুলো শেষ হতো। তবে নেত্রী এবার সাকিবকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তার হাত দিয়েই আমার অসমাপ্ত কাজ গুলো শেষ হবে আশা রাখি।

এদিকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে স্বপ্নে বুক বাধছে মাগুরার মানুষ। তার হাত ধরেই জেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলা আধুনিক মডেল উপজেলা হবে আশা করছে সবাই। সাথে জেলায় কলকারখানার তৈরির দিকে প্রথম নজর থাকবে সাকিবের বলে আশাবাদী সকলে।

এ বিষয়ে সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এই এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। যেহেতু এখানে অনেক কৃষি জমি, কৃষক অনেক বেশি, তাই কৃষিকে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষি ছাড়া এ জেলার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এছাড়া শিক্ষা ও চিকিৎসা এই দুইটা দিকে আরও কাজ করা প্রয়োজন। এবং আইটি নিয়েও কাজ করতে হবে। এই চারটি জায়গায় কাজ করলেও আমার মনে হয় মাগুরা উন্নতি করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, এই জেলার বড় কাজ জব ক্রিয়েট করা। এখানেই ইন্ডাস্ট্রি অনেক কম। সেদিক টাতেও নজর দিতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর