বিএনপির ঘাঁটি বগুড়ায় বেড়েছে নৌকার ভোট!

, জাতীয়

রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-30 15:40:59

বগুড়া থেকে: এক সময়ের বিএনপি ঘাঁটি বলে পরিচিত বগুড়ার ৭টি আসনেই বেড়েছে নৌকার ভোট। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এ আসনগুলোতে টানা জয় পায় বিএনপি। তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মহাজোট গঠন করলে বেশ কিছু আসন শরিকদের ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেয়া আসন গুলোতে জাতীয় পার্টি ও জাসদের প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। যদিও সেবার ভোট বর্জন করেছিল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ধারাবাহিক উন্নয়নের কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। তবে, এই অঞ্চলে জিয়া পরিবারের প্রভাব এখনও অটুট আছে বলে দাবি বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এম এম রুহুল মোমিন তারিক জানান, মূলত নতুন জেনারেশনের কারণে এই অঞ্চলে নৌকার ভোটার বাড়ছে। আরেকটা কথা হচ্ছে অনেকেই মনে করে যে আমাদের ভোট তো প্রতিদিন বাড়াছে। তবে বাড়া বলতে আমাদের যে আসন এগুলো বিএনপির এলাকা তাই তাদেরকে তো এখনো ওভারটেক করতে পারিনি।

নয় মাসে রিপু ভাইয়ের যে কর্মকাণ্ড উনি যে কিছু কিছু কাজ করেছেন মানুষের কাছে যে ওয়াদা করেছেন এটা মানুষের মাঝে আলোড়ন তৈরি করছে। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে। উনি প্লানিং করে কাজ করছে তাই মানুষের মধ্যে নৌকার একটা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশাকরি।

এদিকে, সংসদীয় আসন ৩৯ কাহালু এবং নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া -৪ আসন। বর্তমানে এই আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত উপ-নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আলোচিত ইউটিবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে পরাজিত করে তিনি এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিরো আলমের সঙ্গে লড়াই হবার আভাস পাওয়া গেছে নৌকার প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে  মোট পাঁচ জন প্রার্থী লড়াই করবে। এদের মধ্যে ১৪ দলের শরীক দল জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়াই করবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে রয়েছে শাহীন মোস্তফা, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (ঈগল প্রতীক) নিয়ে লড়াই করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান ( ট্রাক প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত ইউটিবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম লড়াই করছেন ( ডাব প্রতীক) নিয়ে।

অতীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল।

শাজাহানপুর ও গাবতলী উপজেলা এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ সংসদীয় আসন ৪২। এতে মোট ভোটার ৫,১২,২৬৫জন। বগুড়া -৭ আসনে জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এই আসনটিকেও  বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে গণ্য করা হয়।

বগুড়া সদর উপজেলা নিয়ে বগুড়া -৬ আসন। এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪,২৮,০৪৬। এই আসনে এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে মোট ৫ জন প্রার্থী।

এবার এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু লড়াই করবেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তার সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের তিনি লড়ছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে। এর বাইরে আরও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

সরেজমিনে বগুড়ার এই তিনটি আসন ঘুরে দেখা গেছে প্রত্যেকটি আসনে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ভুয়সী প্রশংসা করেছে এসব এলাকার ভোটাররা।

বগুড়া সদর আসনের ভোটার অটোরিকশা চালক মো: শাহ আলম জানান, এবার নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ( ট্রাক প্রতীকের) আব্দুল মান্নান এর সাথে। যদিও এবার নির্বাচনে তেমন কোন প্রচার প্রচারণা করতে দেখতে পাননি তিনি। শুধু মাত্র কয়েকটি পোস্টার আর ফেস্টুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবারের নির্বাচন।

তবে তার দাবি গত উপ-নির্বাচনে রাগেবুল আহসান রিপু ক্ষমতা গ্রহণের পরে এলাকার উন্নয়ন ভালো হয়েছে। এক সময় বিএনপির ঘাটি থাকলেও এখন আর বিএনপির নেতাকর্মী তেমন দেখা যায় না এলাকায়। ভোর চারটা থেকে তিনি অটোরিকশা চালালেও কোথায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় না বলে জানান তিনি। বর্তমান সংসদ সদস্য রিপুকে যেকোনো প্রয়োজনেই পাওয়া যায়। একসময় বিএনপির আধিপত্য থাকলেও এই এলাকায় আওয়ামী লীগের ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আগের থেকে বাড়ছে।

অটোরিকশা চালক শাহ আলম জানান, বিএনপির আমলের চেয়েও এই সরকারের আমলে মানুষের জীবন মান বেড়েছে। ঘরে ঘরে এখন ১৫ টাকা কেজি দরে চাউলের কার্ড করে দিয়েছে। সেই কার্ড দিয়ে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ১০০টাকা দরে টিসিবির ২ লিটার তেল এবং পেঁয়াজ, আটা, সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত।

অথচ এর আগে অন্যান্য সরকার থাকলেও এসব পণ্য পাওয়া যেতো না। সরকার যা করেছে ভালোই করেছে। তবে বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তার। তবে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে স্বস্তির কথাও অকপটে স্বীকার করছেন তিনি।

এদিকে বগুড়া-৪ আসনের বাসিন্দা গফুর মিয়া চায়ের দোকান করে সংসার চালান। এবার নির্বাচনে ভোট দিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ভোট দিয়ে কি হবে যাকে ভোট দেই সে তো আর জিতে আসতে পারে না। সারাদিন শুনলাম হিরো আলম পাশ করছে কিন্তু আইত্তের বেলা মানুষ চেঞ্জ হয়ে গেলো তানসেন পাশ করলো (জাসদ প্রার্থী)। এগ্লা কি কোন ভোট হইলো। এইবার ভোট দিমু কিনা জানি না"।

বগুড়া- সাত আসনের বাসিন্দা হোটেল কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই আসন জিয়ার এখানে অন্যকোন দলের নির্বাচন নাই (ভোট নাই)। কিন্তু এখন মানুষ ভোট দিতে পারে না। যদিও গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুকে সবাই ভোট দিছিলাম। এইবার কি হয় জানি না। আমরা তো ভোট দিবার পারুম কিনা তাই কইতে পারিনা।

এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, রাস্তা ঘাটের উন্নতি হইছে, ব্রিজ হইছে কিছু জিনিসপত্রের তো মেলা দাম। সরকার আগে জিনিসপত্রর দাম কমাক। এইবারে ভোট হলে ভোট দিতে যামু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর