গাইবান্ধা-২: দ্বিধাবিভক্ত আ.লীগ, চাপে মহাজোটের লাঙ্গল

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা | 2023-12-30 13:54:34

গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩০ গাইবান্ধা-২ সদর আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এই নির্বাচন সদর-২ আসনটি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দিলেও আ.লীগের রাজনৈতিক দ্বিধাভক্তির কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কঠিন চাপে পড়েছে মহাজোটের লাঙ্গল। এই আসনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ভোট যুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ অবস্থায় মহাজোটের লাঙ্গল আ.লীগ নেতাকর্মীদের একাংশের সমর্থন পেলেও একচ্ছত্র সমর্থন পাচ্ছেন না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোট যুদ্ধে রয়েছেন ৫ জন প্রার্থী। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন টানা তিন বারের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। কিন্তু গিনি মনোনয়ন পেলেও বিএনপি না থাকা এই নির্বাচনে, নির্বাচন কৌশলে ক্ষমতাসীন আ.লীগ-জাপা সমঝোতায় দলের নির্দেশে তিনি তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ফলে এখন এ আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী রশিদ সরকার। তিনি এই আসনে ১৯৯১-১৯৯৬ সালে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচি হয়েছিলেন। এছাড়া আব্দুর রশীদ সরকার ২০০৯ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে এই আসনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ভোট যুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (ট্রাক)। শাহ সারোয়ার কবীর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতি। তিনিও নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

এছাড়া এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন, শাহ সারোয়ার কবীরের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. মাছুমা আক্তার (ঈগল পাখি), এন এনপি’র জিয়া জামান খান (আম) ও জাসদের মো. গোলাম মারুফ মনা (মশাল)।

আ.লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন থেকেই গাইবান্ধায় আ.লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি রয়েছে। এই আসনে দলীয় বিভক্তির এক অংশে রয়েছেন সাংসদ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। আর অপর অংশে রয়েছেন জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র শাহ জাহাঙ্গীর মিলন। মিলনের সাথেই রয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবীর।

তারা দুজন আপন চাচাতো ভাই ও গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতি।

আ.লীগের এই দুই অংশে শক্ত বিরোধ প্রকাশ্যেই। যার সমাধান মেলেনি এই জাতীয় নির্বাচনেও। দলীয় সিদ্ধান্তে মাহবুব আরা বেগম গিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়ে কাজ করছেন মহাজোটের লাঙ্গলের প্রার্থী আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে। তবে, নির্বাচনে আ.লীগ তাদের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন শাহ সারোয়ার কবীর।

আ.লীগের সেই দলীয় কোন্দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকায় আ.লীগের তৃণমূলেও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরাও। ভোটের প্রচার নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ মাহবুব আরা হয়ে মহাজোটের প্রার্থীর আবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে অনেকটাই চাপে পড়েছে জাতীয় পার্টির তথা মহাজোটের লাঙ্গল।

দুই প্রার্থীই নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দারে দারে ভোট চাইছেন। এছাড়া উভয় প্রার্থীর পক্ষের নেতাকর্মী ও কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থীদের বিপরীতে কড়া সমালোচনাও করছেন। এ আসনের ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও মহাজোটের লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডী ভোটের লড়াই।

লাঙ্গলের প্রার্থী আবদুর রশিদ বলেন, 'এক সময় আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। আমি এমপি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালী সময়ে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। নিশ্চয়ই মানুষ তা ভুলে যায়নি। আশা করছি জনগণ আমাকেই নির্বাচিত করবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (আ.লীগ) বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি সংসদ নির্বাচনে এসে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছি। দায়িত্বপালনকালে অনেক উন্নয়ন করেছি, অনেক কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে আমার। এমপি নির্বাচিত হয়ে তা বাস্তবায়ন করবো। প্রচারণায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর