দ্রুততম সময়ের মধ্যে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার বিরল কৃতিত্ব গড়েছে দুই কিশোরী। তাদের একজন ৮৭ দিনে, অন্যজন ৭০ দিনে হাফেজে কোরআন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
৮৭ দিনে কোরআন মাজিদ মুখস্থ করল সুমাইয়া
মাত্র ৮৭ দিনে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ খেতাব অর্জন করেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরঘোষপুর গ্রামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (১৩)। সুমাইয়া পাবনার দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমী মাদ্রাসার ছাত্রী। এতো অল্প সময়ে হাফেজ হওয়ায় খুশি তার বাবা-মা, সহপাঠী ও শিক্ষকরা। তার শিক্ষকরা বলছেন, এটি আল্লাহ প্রদত্ত বিরল প্রতিভা। আল্লাহতায়ালা তাকে সম্মানিত করেছেন।
পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর গ্রামের কৃষক উজ্জল হোসেন ও শামসুন্নাহার দম্পতির সন্তান সুমাইয়া। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সে বড়। ছোটবেলা থেকেই তার পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
সুমাইয়ার মা শামসুন্নাহার জানান, মেয়েকে চার বছর বয়স থেকে লেখাপড়া শুরু করা হয়। ছোট থেকেই সে খুব মেধাবী। চরঘোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল থেকে ভর্তি হয় পাবনার রাধানগরে মাদানিয়া মাদ্রাসা। এরপর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাইতুন নুর আদর্শ মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সুমাইয়া। সেখানে কিছুদিন পাঠগ্রহণ শেষে দূরবর্তী হওয়ায় আবার সে ভর্তি হয় পাবনার উম্মে হাবিবা মাদ্রাসায়।
সবশেষে পবিত্র কোরআন হেফজ করতে ভর্তি হয় দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমী মাদ্রাসায়। ১৩ বছর বয়সী মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া মাত্র ৮৭ দিনে কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে।
মাদ্রাসাটির হেফজখানার প্রধান হাফেজ আলী হাসান ইয়াসা বলেন, ‘সবাই হাফেজ হতে পারে না। আল্লাহ সবাইকে হাফেজ হিসেবে কবুল করেন না। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আল্লাহ যেকোনো বস্তুকে দামি করে দিতে পারেন। সুমাইয়ার বাবা মাকেও আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন। এটি আল্লাহর নেয়ামত।’
সুমাইয়া খাতুন জানায়, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল কোরআনের হাফেজ হওয়ার। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও সাহস পাচ্ছিলাম না। ভয় কাজ করতো, আমি পারব কি-না। তবে নিজের মেধা, অধ্যাবসায় আর শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় অবশেষে হাফেজ হতে পেরে আমি খুব খুশি। আমার বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনেক অবদান রয়েছে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন ভবিষ্যতে বড় আলেম ও মুহাদ্দিস হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ৮৭ দিনে একজন মেয়ের কোরআনের হাফেজ হওয়ার নজির খুব একটা নেই বাংলাদেশে। তাই সুমাইয়ার কৃতিত্ব অর্জনে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
মাত্র ৭০ দিনে হাফেজ হলেন আছমা আক্তার
মাত্র ৭০ দিনে পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেছে আছমা আক্তার বৃষ্টি নামে ১৪ বছরের এক কিশোরী। সে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার উত্তর আলগী কুহিনূর কারিম মহিলা মাদ্রাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করেছে। আছমা আক্তার রায়পুরা উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের প্রয়াত আসাদ মিয়ার মেয়ে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) মাদ্রাসার পক্ষ থেকে এ উপলক্ষে বিশেষ দোয়া মাহফিল ও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চরসুবুদ্ধি বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিতাস গ্যাস ঠিকাদার সমিতির নরসিংদী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা।
দোয়া মাহফিলের আগে হাফেজ আছমাকে সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ সময় মাদ্রাসার মুহতামিম, শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, আছমা আক্তার বৃষ্টি রায়পুরার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। হঠাৎ তার বাবার মৃত্যুর পর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। খবর পেয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান তাকে মনোহরদী এনে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। চার মাস আগে সাপ্তাহিক তালিমের বয়ানে হাফেজ হওয়ার ফজিলত শুনে সে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
পরে তাকে হেফজ বিভাগে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিনেই সে পাঁচ পৃষ্ঠা কোরআন মাজিদ মুখস্থ করে ফেলে। এভাবে পাঁচ পাড়া মুখস্থ করার পর দৈনিক ১০ পৃষ্ঠা করে মুখস্থ করতে থাকে। ১৮ পাড়া শেষে দৈনিক ২০ পৃষ্ঠা করে মুখস্থ করতে থাকে। এভাবে মাত্র ৭০ দিনে সে পুরো কোরআন মাজিদ মুখস্থ করে ফেলে।
মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে ভিন্ন রকমের প্রতিভা দেখতে পাই। সে অনেক মেধাবী। তার ঐকান্তিক ইচ্ছা, শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাত্র ৭০ দিনে হিফজ সম্পন্ন করেছে। আল্লাহ তাকে অনেক বড় বানাবেন- এই দোয়া করি।’