পবিত্র কোরআন আল্লাহর কালাম। কোরআনে কারিমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও সম্মানিত ও মর্যাদাবান। বিশ্ববাসী এবার তার সাক্ষী হলা। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে পবিত্র কোরআনের ক্যালিগ্রাফি করে অসামান্য অবদানের সম্মাননা হিসেবে শায়খ উসমান তোহাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে সৌদি আরব।
১৮ ডিসেম্বর এক রাজকীয় নির্দেশনায় তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।
সৌদির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সৌদি ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন সিরিয়ান বংশোদ্ভূত শায়খ উসমান তোহা।
সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়ায় মসজিদে হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের আল মুআইকলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘সৌদি নাগরিকত্ব পাওয়ায় পবিত্র কোরআনের ক্যালিগ্রাফার উসমান তোহার প্রতি আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ এর আগে গত ১১ নভেম্বর পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্যালিগ্রাফার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শায়খ মুখতার আলমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত কোরআনের বিখ্যাত মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সের প্রসিদ্ধ ক্যালিগ্রাফার উসমান তোহা। কিং ফাহাদ কোরআন কমপ্লেক্সে দীর্ঘকাল ধরে কোরআনের লিপিকার হিসেবে কাজ করছেন। সৌদি আরবে মুদ্রিত পবিত্র কোরআনের বহুল প্রচলিত কপির অনুলিপি তিনি প্রস্তুত করেছেন।
১৯৩৪ সালে সিরিয়ার হালব নগরে জন্মগ্রহণ করেন উসমান তোহা। তার বাবা শায়খ আবদুহু হোসাইন তোহা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম, খতিব ও সুদক্ষ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তিনি ছোটবেলায় ক্যালিগ্রাফিশিল্পের মৌলিক শিক্ষা বাবার কাছ থেকে লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়া বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৭০ সালে সিরিয়ার আওকাফ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথমবারের মতো পবিত্র কোরআনের অনুলিপি তৈরি করেন।
তৎকালীন সিরিয়ার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের কাছে তিনি ক্যালিগ্রাফি শেখেন। সিরিয়ার মুহাম্মাদ বাদায়ি দাইরানি ও ইরাকের হাশেম মুহাম্মদ আল বাগদাদিসহ অনেক খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফারের কাছে হাতে-কলমে শিক্ষা অর্জন করেন তিনি। আরবি ক্যালিগ্রাফির সুলুস ও নুসুখসহ ফারসি ক্যালিগ্রাফিতেও পারদর্শী প্রবীণ এই লিপিকার।
১৯৮৮ সালে সৌদি আরবের বিখ্যাত কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সে কোরআন লিপিকার ও ক্যালিগ্রাফার হিসেবে যুক্ত হন। এ সময় তিনি ‘মাসহাফ উসামান’ রীতিতে পবিত্র কোরআন লিখতেন। কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সে এসে তিনি কোরআনের চারটি অনুলিপি তৈরি করেন। তার অনুলিপি করা কোরআনের কপি ২০০ মিলিয়নের বেশি সারা বিশ্বে বিতরণ করা হয়। উসমান তোহা প্রায় ১৩ বারের মতো পুরো কোরআনের অনুলিপি তৈরি করেন।
আগে সব সময় অজু করে নির্ধারিত কলম দিয়ে পবিত্র কোরআনের অনুলিপি তৈরির কাজ শুরু করেন উসমান তোহা। নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করে উসমান তোহা বলেন, কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সের ভেতর একবার তিনি নির্ধারিত কলম দিয়ে লেখা শুরু করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও কলম লিখছিল না। তখন তার মনে পড়ল, তিনি অজু অবস্থায় নেই। অজু করে এসে ফের লিখতে বসেন। তখন কলম লিখতে শুরু করে।
বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাবা ছোটবেলায় আমাকে বলেছিলেন- পুত্র, আমার কথা শোনো। তুমি খুবই মেধাবী। ক্যালিগ্রাফির মধ্যে বেশি সময় ব্যয় করবে না। আগে ইলম অর্জন করো। সময় নষ্ট করো না। নতুবা তুমি মূর্খ ক্যালিগ্রাফার হবে। তাই ভালো করে পড়ো। তাহলে তুমি বড় আলেম হবে এবং ক্যালিগ্রাফারও হবে।’ সাধারণত ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে লেখার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু উসমান তোহা ৮৬ বছর বয়সেও একাধারে লিখে চলছেন।