ভারতের ঊনিশ বছর বয়সী তরুণী ফাতিমা সাহাবা মাত্র ১৪ মাসে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে পুরো কোরআনে কারিম লিখে শেষ করেছেন। তার এই কাজে শুধু আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নয়, অপরিচিতজনরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন, করছেন প্রাণভরে দোয়া।
ফাতিমা বর্তমানে থাকেন দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালার কান্নুর জেলার কোডাপারমবা শহরে। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা এবং ক্যালিগ্রাফির প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক ছিল। প্রায়ই তিনি ছবি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। তারাও উৎসাহ দিতেন।
ক্লাস টেন পর্যন্ত ফাতিমা সাহাবা তার পরিবারের সঙ্গে ওমান থাকতেন। সেখানেই তিনি ক্যালিওগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং প্রায় প্রতিদিনই ক্যালিগ্রাফি করার চেষ্টা করতে থাকেন। আরবিতে এত ধরনের সুন্দর নকশা রয়েছে যা একজন শিল্পীর জন্য খুবই আকর্ষণীয়। এক ছোট বোন ও ভাই আর মা-বাবা নিয়ে তার পরিবার।
কোরআনের ক্যালিগ্রাফি শুরুর আগে ফাতিমার বাবা একজন মাওলানার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানতে চান, ফাতিমা কোরআন লিখতে পারবে কি না। মাওলানা তাকে জানান, এ নিয়ে ধর্মীয় কোনো বিধি-নিষেধ নেই। ফলে ফাতিমাকে কোরআন ক্যালিগ্রাফির অনুমতি দেওয়া হয়।
ফাতিমা মাগরিবের নামাজ পড়ে কোরআন লেখার কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর আগস্ট মাসে আমি ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করি এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি কোরআনের ক্যালিগ্রাফির কাজ শেষ করি।’
‘আমার ছোট ভাই-বোন আছে। আমি ভাবতাম ক্যালিগ্রাফির সময় তারা হয়তো জ্বালাতন করবে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, তারা জ্বালাতন তো করছেই না, বরং বিভিন্নভাবে আমাকে সহযোগিতা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভয় ছিলো, আমি হয়তো কাজে কোনো ভুল করে ফেলব। ছবি আঁকার সময় আমার মা তাই পাশে বসে থাকতেন এবং কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখলে ধরিয়ে দিতেন।’
যাতে কোনো ধরনের ভুল না হয় সে জন্য ফাতিমা প্রথমে পেন্সিল দিয়ে ক্যালিগ্রাফির নকশা তৈরি করতেন।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতাম যে কোথাও কোনো ভুল নেই, তারপর আমি কলম দিয়ে নকশাগুলোকে চূড়ান্ত করতাম। আমার মনে হতো, এত বড় এবং কঠিন কাজ কি আমি শেষ করতে পারবো? আমার নিজের ক্ষমতা নিয়েও মাঝে-মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতো। কিন্তু দেখা গেল প্রতিদিন কাজটা করতে গিয়ে আমি বেশ আনন্দ পাচ্ছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কোন দিক দিয়ে কেটে যেত টেরই পেতাম না।’
ফাতিমা পুরো কোরআন ক্যালিগ্রাফি করেছেন ৬০৪ পাতায়। তবে কাজের মান ও সৌন্দর্য নিয়ে ফাতিমার নিজেরই অভিযোগ রয়েছে। তার মতে, ‘শুরুর দিকে কাজগুলো ভালোই ছিল। কিন্তু পরের দিকে কাজ আরও ভালো। কাজ করতে করতে শেষ দিকের হাতের কাজগুলো আরও সুন্দর হতে থাকে। এখন আফসোস হচ্ছে, পুরো কাজ যদি শেষের কাজের মতো হতো তাহলেই কতই না ভালো হতো।’
ফাতিমার মা নাদিয়া রউফ ও বাবা আবদুর রউফ মেয়ের এমন কাজে বেশ খুশি। তারা বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে হাজার শোকর, এ রকম একটি মিষ্টি আর ধর্মভীরু মেয়ে আমাদের দিয়েছেন। যে তার কাজের মাধ্যমে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’