‘করোনাকে সহজেই জয় করা সম্ভব’

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:03:55

করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভারতে চলেছে ২১ দিনের লকডাউন। এ লকডাউনে কারখানা, বিপণীবিতান, গণপরিবহনসহ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায়ের চর্চা শুরু হয়েছে দেশটিতে।

সবশেষ খবর অনুযায়ী ভারতে ১ হাজার ৩০০ এর বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন প্রায় ৩৫ জন। সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কেরালা ও মহারাষ্ট্রে। এই দুই রাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে।

তবে এর মধ্যেও আশা জাগালেন হায়দরাবাদ ভিত্তিক এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইজি) চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি। সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদক জিএস ভাসু-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, করোনা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমরা সহজেই একে জয় করতে পারি। আর লকডাউন তিন থেকে চার সপ্তাহের বেশি দীর্ঘায়িত করা উচিত না।

পদ্মভূষণ জয়ী এই চিকিৎসক দুটি বিষয় খুঁজে পেয়েছেন যা ভারতকে আশার আলো দেখাতে পারে। এর মধ্যে একটি তিনি পেয়েছেন জিনোম সিকোয়েন্সিং থেকে এবং অন্যটি পেয়েছেন ভাইরাসের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে গবেষণা থেকে। এর সঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি 'সামাজিক দূরত্ব' শব্দটি পরিহার করতে চান এবং কেন ইতিবাচক থাকাটা জরুরি।

রেড্ডি বলেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই ভাইরাসটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চীনে সামুদ্রিক প্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের উহান হয়ে এই ভাইরাস পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। এর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর ভারতে আসে। এই সময় আমরা ভাইরাসটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।

আমরা গবেষণায় দেখেছি যে, ভাইরাসটি এক ধরনের আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস। এটি দেখে মনে হচ্ছিল এটি বাদুর থেকে ছড়াতে পারে। তবে এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ভাইরাসটিতে খুব সম্ভবত মিউটেশন ঘটেছে যা মানবদেহে ছড়াতে সাহায্য করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে যখন ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি কিংবা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে তখন এর জিনোটাইপ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।

ভারত এবং ইতালির ভাইরাসে যথেষ্ট অমিল দেখা গেছে। ভারতে করোনাভাইরাসের স্পাইক (কাঁটা বা তন্তু যা দিয়ে মানব কোষে আটকে থাকে) প্রোটিনে একটি মিউটেশন ঘটেছে। এই মিউটেশনের ফলে স্পাইক দুর্বল হয়েছে। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য দিকে ইতালিতে ভাইরাসে তিনটি মিউটেশন ঘটেছে যা মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

ভাইরাসের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র ছেপেছে, যেখানে দেখা গেছে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি হলেই এই ভাইরাস আর বেঁচে থাকতে পারে না। ভারতে যদি তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তবে ভাইরাসের প্রকোপ কমে যেতে পারে। কিন্তু ঘরের ভেতর বা যেখানে তাপমাত্রা কম সেখানে সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা ভাইরাস ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু সেটাও মে মাসের পর। এমআইটির গবেষণাটি পাক্ষিক পর্যালোচনা, যা সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি। এটা আসলে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভরশীল।

আমি দেখতে পাচ্ছি যে, লকডাউন মানুষের আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। লোকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এই আচরণগত পরিবর্তন ক্রমে বাড়ছে। লোকেরা ঘরে থেকে টিভিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর শুনছে। এবং তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আসলে আমাদের উচিত পরিষ্কার দিক -নির্দেশনা দেওয়া। লোকজন ভয় পেয়ে আত্মহত্যার মত ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়েছে। আগামী দুই অথবা তিন মাসের মধ্যে ওষুধ এবং ১৬ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। ২০২২ সালে সবাই এই ভাইরাসকে ভুলে যাবে যখন এর টীকা আবিষ্কৃত হয়ে যাবে। সে পর্যন্ত সে সময়টা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এটিকে সহজেই জয় করা সম্ভব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর