ভারতের প্রতিটি রাজ্যে সরকার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রাদেশিক নেতাদের সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধী।
হায়দ্রাবাদে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির রবিবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে সোনিয়া বলেছেন, ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোর সঙ্গে কংগ্রেসকে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। রাহুল গান্ধীও একইভাবে বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে মজবুত করার কথা বলেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজার জানিয়েছে, সোনিয়া-রাহুল আলাদাভাবে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও নয়াদিল্লির কথা উল্লেখ করেননি।
তবে দলের পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সিংহভাগ রাজ্যেই ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোর সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়ে রয়েছে বা হতে সমস্যা হবে না।
এক্ষত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লি ও পাঞ্জাব। এই তিন রাজ্যের প্রদেশ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তৃণমূল ও আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে জোট নিয়ে সমস্যা রয়েছে।
তাই সোনিয়ার ওই সহযোগিতার নির্দেশ এই তিনটি রাজ্যের জন্যই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাদের মতে, আজ এই রাজ্যগুলোতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নমনীয় হওয়ার বার্তা দিলেন সোনিয়া।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তৃণমূল শিবিরও চাইছে, কংগ্রেস আসন সমঝোতার প্রশ্নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক। অক্টোবর মাসের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলা হোক। আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টিও দ্রুত আসন সমঝোতা চাইছে। সেদিকে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবে ইন্ডিয়াকে মজবুত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়া জোটের গঠন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে নড়িয়ে দিয়েছে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ইন্ডিয়ার নির্বাচনী সাফল্যের প্রতিজ্ঞা করছে।
দুই দিন আগেই ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বিবৃতিতে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ইডির সমনকে প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
রবিবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেন, মুম্বাইতে ইন্ডিয়ার বৈঠকের পরে ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরকে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী নেতাদের উপরে বদলা নিতে মাঠে নামিয়েছে।
সরাসরি অভিষেকের বিরুদ্ধে সমনের কথা না বললেও খড়্গের বলেন, এই সব পদক্ষেপ সুস্থ গণতন্ত্রের চিন্তার বিরুদ্ধে। কিন্তু, আফশোস হলো, এটাই এখন বাস্তব।
এদিকে, সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। আজ সেখানেও মোদি সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার বলে জানিয়েছেন খড়্গে।
তিনি বলেছেন, সোমবার থেকে পাঁচ দিনের বিশেষ সংসদ অধিবেশনের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পুরো ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার জন্য মোদি সরকার বিল নিয়ে আসছে। তার বিরোধিতা করা হবে। কিন্তু মোদী সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
খড়্গে বলেন, এই সরকার বিরোধী দলহীন সরকার চায়। ওরা চায় না সরকারকে কোনও সাংসদ, সংবাদমাধ্যম বা আমজনতা প্রশ্ন করে।
শনিবার হায়দরাবাদে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরে রবিবার বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসবে। শনিবারই একাধিক কংগ্রেস নেতা দাবি তুলেছেন, রাহুল গান্ধী যেন দ্বিতীয় ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করুন।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম জানান, দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভারত জোড়া যাত্রার সাফল্যের পরে পূর্ব-পশ্চিম ভারত জোড়ো যাত্রার অনুরোধ করেছেন অনেকে। এই বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে।
প্রসঙ্গত, সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও প্রত্যাবর্তন ঘটেছে রাহুলের।