কুষ্টিয়ায় বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য ঘর

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-12-27 15:14:03

কুকুর খুবই সামাজিক প্রাণী। তাদের মধ্যে পরিবার এবং গোষ্ঠীর প্রতি এক ধরনের দায়িত্ববোধ থাকে। অনেক মানুষ কুকুরের কৃতজ্ঞতাবোধ এবং পাহারা দেওয়ার দক্ষতার কারণে নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেকুকুরও প্রভুকে তার গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে দেখে এবং সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে।

তবে সব প্রাণীদের ভাগ্য একরকম হয় না। একদিকে যেমন কিছু কুকুরের সৌভাগ্য হয় মনিবের পরিবারের সদস্য হয়ে ভালোবাসা লাভের। তেমন অনেক দেশী প্রাণীর ঠাঁই হয় রাস্তায়। নির্দিষ্ট মালিকবিহীন এই কুকুরগুলো বেওয়ারিশভাবে ঘুরে বেড়ায় রাস্তায়। সামান্য সহানুভূতিতে তাদের চোখে স্বভাববশত ফুটে ওঠে প্রভুভক্তি। তবে মানুষের মানবিক দিকই তো তাকে সৃষ্টির সেরা জীব বানায়। উদারতা থেকেই আশ্রয়হীন এই কুকুরদের জন্যই বিচ্ছিন্ন থাকার জায়গা দেখা গিয়েছে।  

কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুর বাচ্চা প্রসব করেছে। শীতের রাতে আশ্রয়হীন এসব কুকুরের অনেক কষ্ট। এটি উপলব্ধি করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে ঘর। ঘরের ভেতরে বিছালী বিছিয়ে রাখা হয়েছে। রয়েছে পাত্রে কুকুরের জন্য পানি ও খাবার। ঘরের সামনে লিখে রাখা, ‘অরণ্যচারী মানুষের প্রথম বন্ধু কুকুর। বন্ধুর যত্ন নিন। তাকে ভালোভাবে থাকতে দিন।’

কুকুরকে মানুষের সবচেয়ে সাহায্যকারী বন্ধু প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী কুকুরদের আমরণ প্রভুভক্তির বিভিন্ন নজিরও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে। মানুষের থেকে সামান্য সাহায্য পেলেও তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। প্রভুর আদর, খাবার এবং আশ্রয় কুকুরের মনে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগায়। এই ব্যাপারগুলো এই শ্রেণির প্রাণীদের আরও বেশি প্রভুভক্ত করে তোলে।

এই অনুভূতি উপলব্ধি করে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া, এনএস রোডনারিকেলতলা এলাকা ও চর থানাপাড়া এলাকায় কুকুরের জন্য চারটি ঘর স্থাপন করা হয়েছে। স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ঘর বানানো হয়েছে। গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে আমলাপাড়া বড় ড্রেনের সামনে কুকুরের জন্য বানানো ঘরের উদ্বোধন করা হয়।

বেওয়ারিশ কুকুরদের জন্য আশ্রয় / ছবি: সংগৃহীত

উদ্যোক্তারা বলেন, রাত-বিরাতে শহরে ঘুরতে ফিরতে দেখা যায় যে কুকুরেরা এদিক–সেদিক ঘেউ ঘেউ করে। শহরের স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাসাবাড়ি—সবকিছুই এখন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে কারও আঙিনায় কুকুর ঢুকতে পারে না। শীতের রাতে বাচ্চাগুলোর খুব কষ্ট হয়। এ চিন্তা করেই রাত পাহারা দেওয়া বন্ধু কুকুরের জন্য আশ্রয় স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি জায়গায়।

এসময় জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কুষ্টিয়ার সভাপতি পশুপ্রেমী শাহাবুদ্দিন মিলন, রনিতা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, ইকোনমি কুষ্টিয়ার চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম জামাল, "স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা"র সভাপতি সাদিক হাসান রহিদ, সদস্য তানজীল, এসএ টিভির সাংবাদিক নুর আলম দুলাল, চিত্রগ্রাহক কোহিনূর ইসলাম ও হারুন প্রমুখ।

আক্তার হোসেন বলেন, আমি নিজেও প্রাণীপ্রেমী। কুকুরের ঘর বসানোর সময় পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে এনে টুকরো টুকরো করে তা কুকুরকে খেতে দেন।

তিনি বলেন, হাউজিং এলাকায় আমার বাসা এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ‘গত তিন-চার বছর ধরে একদল কুকুর আমাকে দেখলেই ছুটে আসে। তাদের সাধ্যমতো খাবার দিই। এবারই দেখলাম কেউ কুকুরের জন্য আবাসনের চিন্তা করল। বিশেষ করে স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা এই তীব্র শীতে কুকুর এবং বাচ্চাদের জন্য কাঠের ঘর নির্মা করলো এটি খুব ভালো উদ্যোগ। কুকুরকে নিয়ে এভাবে আসলে কেউ এভাবে চিন্তা করি না।’ এভাবেই অনেকেই এগিয়ে এলে সমাজ পরিবেশ এবং প্রকৃতি বদলে যাবে।

এ সময় কথা হয় জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কুষ্টিয়ার সভাপতি পশুপ্রেমী শাহাবুদ্দিন মিলনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এখানে থাকা একটি কুকুরের পাঁচটি বাচ্চা হয়েছে। শীতের রাতে বাচ্চাগুলো খুব কষ্ট করে। একটি দোকানের পিছনে রাখা বালুর স্তূপে রাতে ঘুমায়। কুকুরের জন্য ঘর এ শহরে নতুন সংযোজন।

সাংবাদিক এসএম জামাল বলেন, প্রাচীনকাল থেকে কুকুর এবং মানুষের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে গড়ে উঠেছে। মানুষ যখন কুকুরকে গৃহপালিত করতে শুরু করে, তখন থেকেই কুকুর মানুষকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে। এই দীর্ঘ সম্পর্ক কুকুরের মধ্যে প্রভুভক্তির একটি স্বভাব তৈরি করেছে।

কুকুরের প্রসব সময়কে মনে করে ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এখন কুকুরের বাচ্চা হচ্ছে। বাচ্চাগুলো যাতে বেঁচে থাকে, সে জন্য শহরের পথে পথে স্থাপন করা হয়েছে এসব আশ্রয় ঘর।

সংগঠনের সভাপতি সাদিক হাসান রহিদ বলেন, ‘আমরা শীতে কুঁকড়ে যাই, নানাভাবে শীত নিবারণ করি। কিন্তু কুকুরগুলোর তো ঘর নেই। কুকুর আমাদের পরম বন্ধু, বন্ধুর জন্য কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকে ঘরগুলো করা। সুযোগ থাকলে কেউ কিছু খাবার ও পানি রেখে আসতে পারেন ঘরে অথবা নজর রাখতে পারেন আশ্রয়গুলোর।’ আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো চারটি ঘর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করেছি। সহযোগিতা পেলে শহরের সর্বত্র মোড়ে মোড়ে কুকুরের জন্য আশ্রয় এ ঘর স্থাপন করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর