উত্তাল জাবি ক্যাম্পাস, ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'-এর আন্দোলনের ডাক

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-06 19:07:18

ধর্ষণ ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ-এর ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে  আন্দোলনের ঘোষণা করা হয়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত এক নারী ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ও হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো- প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, আবাসিক হলে অবৈধভাবে অবস্থান করা অছাত্রদের বের করে দেওয়া, নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরিচ্যুত করা এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সনদ বাতিল ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

এসময় দাবিগুলি অতি শিগগির বাস্তবায়িত না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধীরা ক্রমাগত অপরাধ করে যায়; তাদের কোনো বিচার হয় না। বিচার না হতে হতে আজ তারা ধর্ষকে পরিণত হয়েছে। আমরা আগে বলতাম, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য নিরাপদ'। কিন্তু আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। ধর্ষকের কারখানা গোড়া থেকে বন্ধ করতে হবে। গণরুম, গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে হবে।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক, উপাচার্য সাহেব নির্বিকার থাকেন। আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই। অভিভাবক আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে হলে রাখছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা অছাত্রদের হল থেকে বের করতে চাই! অপরাধের বিচার চাই! ক্যাম্পাসের নির্বিকার প্রশাসনের নিরসন চাই!’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘হল প্রশাসন প্রথমে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে। এরপর তারা ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রশাসন সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলনে যাবো। উপাচার্যকে বলতে চাই, আপনি আপনার চেয়ার খুবই পছন্দ করেন। আপনি যদি এ চেয়ারে থাকতে চান, তাহলে অতিদ্রুত এই ঘটনার বিচার করুন।’

মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচদিন সময়ের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত  অভিযুক্ত ছাত্রদের তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না করে থানায় শুধু একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। উপাচার্য বার বার বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কমিটমেন্ট দেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না, যেমনটি হয়েছে মাহমুদুর রহমান জনির ক্ষেত্রে। প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে এখন পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি।’

তিনি আরে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে। তাহলে এই তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ হবে কীভাবে! ধর্ষককে যারা পালাতে সাহায্য করেছে, তারা ছাত্রলীগের কর্মী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তাফিজকে খুঁজে আনতে পাঠিয়েছিলেন ছাত্রলীগের দুজন কর্মীকে। তাহলে প্রক্টোরিয়াল টিমের কাজ কী? এখান থেকে বোঝা যায়, অভিযুক্তদের আটক করতে প্রক্টরের কোনো সদিচ্ছা ছিল না। এই প্রক্টর পদে বহাল থাকার সব ধরনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’

এসময় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন- ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আরেফিন।

এছাড়া এসময় উপস্থিত ছিলেন আইবিএ'র অধ্যাপক আইরিন আক্তার, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা ও অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রনি হোসাইনসহ ২০ জন শিক্ষক এবং শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।

এদিকে, মানববন্ধন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিকেল ৪টায় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইয়ান রাইনকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সদস্য-সচিব করে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'র একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন শেষে নতুন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য-সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ জানান, আমরা এখান থেকে ভিসির কাছে যাবো। আমাদের যে দাবি রয়েছে, কালকে সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আগে তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজেন্ডা পূর্ণ করতে হবে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে। সেটা যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আমরা দুপুর ২টার সময় রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেবো এবং সিন্ডিকেট মিটিং আটকানো হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর